আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বাগৰ্থিক জ্ঞান তত্ত্ব
বাগৰ্থিক জ্ঞান তত্ত্ব
রিচার্ড লার্সন ও গ্যাব্রিয়েল সেগাল (১৯৯৫) তাদের সত্য শর্তমূলক বাগধিক জ্ঞান তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তাদের মতে বাগার্থিক জ্ঞান মানুষের সামগ্রিক জ্ঞানের অংশবিশেষ । তাই বাগর্থতত্ত্ব জ্ঞানতত্ত্বের অংশ।
নোয়াম চমস্কির মতো তারা মনে করেন যে মানুষের ভাষা অনুষদ গঠিত হয় ভাষিক জ্ঞান বা যোগ্যতা দ্বারা এবং ভাষা অনুষদে থাকে একটি বাগর্থিক প্রকোষ্ঠ যাতে থাকে অর্থের জ্ঞান এবং যা ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ইত্যাদির জ্ঞান থেকে পৃথক । ভাষা অনুষদে বাগর্থবিদ্যার অবস্থান লার্সন ও সেগাল একটি চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন :
এখানে দেখা যাচ্ছে বাগর্থবিদ্যা একসাথে বাক্যতত্ত্ব, প্রয়োগবিদ্যা ও বিশ্লেষকের সাথে যুক্ত। অর্থাৎ মানুষ যখন বাক্য গঠন করে, কথোপকথনে বাক্য প্রয়োগ করে এবং দ্রুত বাক্য বিশ্লেষণ করে তখন সে অর্থকে কাজে লাগায় । এভাবেই বাগধিক জ্ঞান অন্যান্য ভাষাজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত
লার্সন ও সেগালের মতে বাগর্থবিদ্যা একটি জ্ঞান সম্পর্কিত শাস্ত্র, তাই একে জ্ঞানাত্মক ভাষাবিজ্ঞানের শাখা বলা যেতে পারে। তাদের মতে এটি একাধারে যুক্তিবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের সাথে যুক্ত। অন্যান্য শৃঙ্খলার সাথে বাগর্থবিদ্যার সম্পর্ক তারা এভাবে প্রদর্শন করেন :
বাগর্থবিদ্যা অন্যান্য বিজ্ঞানের সাথে মৌনভাবে যুক্ত এই অর্থে যে বাগর্থবিদ্যা তাদের শাখা না হয়েও বা তাদের সাথে একীভূত না হয়েও তাদের অনুসন্ধান ও অন্তর্দৃষ্টিকে নীরবে অর্থ বিশ্লেষণের কাজে লাগায় ।
লার্সন ও সেগালের মতে বাগর্থিক তত্ত্বের কাজ হলো বাগর্থিক প্রকোষ্ঠের বিষয়াবলী বর্ণনা করা। অর্থাৎ এর কাজ হলো বাগধিক জ্ঞানের নিয়মনীতি ব্যাখ্যা করা। এই নিয়ম ও নীতিগুলো হবে সংখ্যার দিক দিয়ে সীমিত এবং রূপের দিক দিয়ে বিরচনামূলক। লার্জন ও সেগাল জ্ঞানকে একটি প্রকল্পের আকারে প্রকাশ করেন যাকে বলা যায় T-প্রকল্প:
T-প্রকল্প : কোন ভাষা L এর জন্য রক্তার অর্থের জ্ঞান হলো অবরোহী সংস্রয়ের জ্ঞান (অর্থাৎ স্বতঃসিদ্ধ ও উৎপাদন নিয়মের সংশয়) যা প্রমাণ করবে (T) রূপের উপপাদ্য, যে রূপ L -এর বাক্যসমূহের জন্য অর্থব্যাখ্যামূলক ।
প্রকল্পটি আপাতদৃষ্টিতে একটু জটিল। বাচনিক যুক্তিবিদ্যা প্রয়োগ করে এর ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । এ তত্ত্বের তিনটি অংশ রয়েছে :
ক. প্রান্তিক গ্রন্থির স্বতঃসিদ্ধ
খ.অপ্রান্তিক গ্রন্থির স্বতঃসিদ্ধ
গ. উৎপাদন নিয়ম
১. সার্বজনীন স্টান্টীকরণ
২. সমরূপ আরোপন
প্রান্তিক গ্রন্থি ও অপ্রান্তিক গ্রন্থির ধারণাপুটি গঠনচিত্রের সাথে যুক্ত। আমরা ব্যাপারটি এমন নয় যে ঝন্টু ম চিনে এই বাক্যটির বৃক্ষচিত্রের দিকে তাকাতে পারি :
এখানে যে ব্যাপারটি লক্ষ্যণীয় তা হলো বা, বা, এর অন্তর্ভুক্ত । অর্থাৎ ব্যাপারটি এমন নয় যে ঝন্টু মন্টুকে চিনে এই বৃহত্তর বাক্যটি বিভাজিত করে প্রান্তিক পর্যায়ে ঝন্টু মন্টুকে চিনে এই সরল বাক্যটি পাওয়া গেছে । কাজেই এখানে বা, কে বলা হবে প্রান্তিক গ্রন্থি এবং বা, কে বলা হবে অপ্রান্তিক গ্রন্থি। এবার আমরা বাক্যের নিয়ম তৈরী করতে পারি:
৩.
ক. বা → আবুল চিন্তা করে গ. বা → ঝন্টু মন্টুকে চিনে ক. বা → বা এবং বা
খ. বা বাবুল ঘুমায় বা → বা অথবা বা গ. বা ব্যাপারটি এমন নয় যে বা
এবার বন্ধনী ব্যবহার করে বাক্যকে বিভিন্ন বিন্যাসে সাজাতে পারি :
গ. (ক আবুল চিন্তা করে খ. (বাবুল ঘুমায় গ. ( ঝন্টু মন্টুকে চিনে)
ঘ. (বা ( আবুল চিন্তা করে) এবং ( বাবুল ঘুমায় )
ঙ. (বা ( বাবুল ঘুমায়) এবং ( ঝন্টু মন্টুকে চিনে))
চ. (বা (খ) আবুল চিন্তা করে) অথবা (খ বাবুল ঘুমায় )
ছ. (বা ( বাবুল ঘুমায়) অথবা (খ) ঝন্টু মন্টুকে চিনে))
জ. (বা (4) আবুল চিন্তা করে) এবং (বা (যা বাবুল ঘুমায়) অথবা (বা রুন্টু মন্টুকে চিনে))) এর (বা (= ব্যাপারটি এমন নয় যে (বা ( আবুল চিন্তা করে) অথবা (বা বাবুল ঘুমায়)))
ঝ. (বা (ত ব্যাপারটি এমন নয় যে (ব ঝন্টু মন্টুকে চিনে))
এ থেকে এটি প্রমানিত হয় যে, ১ এবং ২ এর নিয়মগুলো উৎপাদনশীল ও পুনরাবৃত্তিমূলক। এবার সর্তশর্তমূলক নীতি আরোপ করে প্রান্তিক গ্রন্থির জন্য স্বতঃসিদ্ধ তৈরী করা যায় :
ক. বা” সত্য যদিদি সত্য হয় (a
উদাহরণযোগে বলা যায়
=
যে কোন প্রাপ্তিক বাক্য)
আবুল চিন্তা করে সত্য যদিদি আবুল চিন্তা করে ।
খ. বাবুল ঘুমায় সত্য যদিদি বাবুল ঘুমায় । গ. ঝন্টু মন্টুকে জানে সত্য যদিদি ঝন্টু মন্টুকে জানে ।
একই অপ্রান্তিক গ্রন্থির জন্যও স্বতঃসিদ্ধ তৈরি করা যায় (বা, বা, এবং বা, -কে তিনটি কাব্য ধরে) :
4.
ক. (বা, এবং বা.) সত্য যদিদি বা, এবং বা, উভয়ই সত্য হয়।
খ. (in বা, অথবা বা.) সত্য যদিদি বা, এবঙ বা যে কোন একটি সত্য হয় ।
গ. কি ব্যাপারটি এমন নয় যে বা) সত্য যদি ব্যাপারটি এমন নয় যে বা, সত্য হয় ।
এবার উৎপাদন নিয়ম প্রসঙ্গে আসা যাক। উৎপাদন নিয়মের সাহায্যে ৗেক্তিকভাবে সিদ্ধান্ত অনুমান ও প্রমান করা যায়। উৎপাদন নিয়ম দুটি। প্রথমটি হলো সার্বজনীন দৃষ্টান্তীকরণ। এটিকে এভাবে লেখা হয় !
For any S, F(S)
F(a)
এটিকে বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় এরকম :
যে কোন বা এর জন্য, অ (বা)
অ (1)
এই নিয়মের তাৎপর্য হলো এর মাধ্যমে সাধারণ নিয়মকে বিশেষ দৃষ্টান্তের উপর প্রয়োগ করা যায়। যেমন ৪ এবং ৫ – যে নিয়মগুলো আছে এই নিয়মের ফলে আমরা তা যে কোন বাক্য বিশ্লেষণে প্রয়োগ করতে পারি ।
দ্বিতীয় উৎপাদন নিয়মটি হলো সমরূপ আরোপন। নিয়মটিকে এভাবে লেখা হয় :
F(α)
a iff B
F(B)
বাংলায় রূপান্তর করলে এটির খুব বেশি রদবদল হবে না (আমরা মনে করি সার্বজনীনভাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে বলে গ্রীক হরফ অপসারণ করা যুক্তিসঙ্গত বা নিরাপদ নয়) :
অ (a)
ct যদিদি B
অ (B)
এর অর্থ হলো যদি আমরা সম্বলিত কোন বিবৃত্তি প্রমাণ করে থাকি এবং তারসাথে প্রমাণ করে থাকি যে a. ও B সমতুল্য তাহলে আমরা a কে B দিয়ে অপসারণ করতে পারবো ।
প্রান্তিক গ্রন্থির স্বতঃসিদ্ধ, অপ্রান্তিক গ্রন্থির স্বতঃসিদ্ধ এবং উৎপাদন নিয়ম এই তিনটি উপাদান মিলে তৈরী হয় অবরোহী সংগ্রায় । প্রান্তিক ও অপ্রান্তিক গ্রন্থির স্বতঃসিদ্ধকে বলা হয় অর্থব্যাখ্যামূলক নিয়ম । সার্বজনীন দৃষ্টান্তীকরণ এবং সমরূপ আরোপন এ দুটি উৎপাদন নিয়ম প্রয়োগ করে বাগথিক স্বতঃসিদ্ধ থেকে বাচনিক যুক্তিবিদ্যার যে কোন স বাক্য (T sentence) প্রমাণ করা যায়।
একটি আহরণের দৃষ্টান্ত দিয়ে ব্যাপারটি পরীক্ষা করা যাক। আমরা প্রথমে একটি বাক্য নেই। বাক্যটি হতে পারে পূর্বোক্ত ৩৮ (সংক্ষেপন হিসাবে আমরা সার্বজনীন দৃষ্টান্তীকরণ ও সমরূপ আরোপনের জন্য যথাক্রমে সাদৃ ও সআ ব্যবহার করবো) :
১. (বা (a আবুল চিন্তা করে) অথবা ( বাবুল ঘুমায় ) এবার আমরা ৫খ স্বতঃসিদ্ধের উপর সাদৃ আরোপ করলে পাবো –
২. (বা ( আবুল চিন্তা করে) অথবা ( বাবুল ঘুমায়)) সত্য যদিদি হয় ( আবুল চিন্তা করে ) সত্য অথবা ( বাবুল ঘুমায় ) সতা
৩. ক. ( আবুল চিন্তা করে) সত্য যদিদি আবুল চিন্তা করে সত্য হয় (স্বতঃসিদ্ধ এক ও সাদৃ প্রয়োগ করে)
খ. বাবুল ঘুমায় সত্য যদিদি বাবুল ঘুমায় সত্য হয় (স্বতঃসিদ্ধ ৪ক ও সাদৃ প্রয়োগ করে)।
৪. ক. আবুল চিন্তা করে সত্য যদিদি আবুল চিন্তা করে (৪খ প্রয়োগ করে )
খ. বাবুল ঘুমায় সত্য যদিদি ঘুমায় (৪খ প্রয়োগ করে)
৫.
ক. (বা আবুল চিন্তা করে) সত্য যদিনি আবুল চিন্তা করে সত্য হয় (এক) আবুল চিন্তা করে সত্য যদিদি আবুল চিন্তা করে (৪)
(া আবুল চিন্তা করে) সত্য যদিদি আবুল চিন্তা করে (এক, এক, সআ দ্বারা)
একইভাবে
খ, ( বাবুল ঘুমায় সত্য যদিদি বাবুল ঘুমায় সত্য হয় (৩খ) বাবুল ঘুমায় সত্য যদিদি বাবুল ঘুমায় (৪২)
( বাবুল ঘুমায় সত্য যদিদি বাবুল ঘুমায় (৩২, ৪খ, সম দ্বারা)
এবার ৫ ক ও খ এর সিদ্ধান্ত লেখা যায়
৬.
ক. ( আবুল চিন্তা করে) সত্য যদিদি আবুল চিন্তা করে
( বাবুল ঘুমায় সত্য যদিদি বাবুল ঘুমায়
৭. (বা ( আবুল চিন্তা করে) অথবা ( বাবুল ঘুমায়)) সত্য যদিদি হয় আবুল চিন্তা করে অথবা (বাবুল ঘুমায়) সত্য (২, ৬ক, সম দ্বারা
একইভাবে ২, ৬খ ও সআ দ্বারা ( বাবুল ঘুমায় কে বাবুল ঘুমায় এ রূপান্তরিত করে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি- • (বা () আবুল চিন্তা করে) অথবা ( বাবুল ঘুমায়)) সত্য যদিনি আবুল চিন্তা করে অথবা বাবুল ঘুমায় । আহরণ প্রক্রিয়া যদি মনস্তাত্ত্বিকভাবে সঠিক হয় তাহলে বলা যায় মানুষ এই প্রক্রিয়ায় বাক্যের অর্থ উপলব্ধি করে থাকে অথবা তার সত্যতা বিচার করে থাকে।
আরও দেখুন: