লীচের প্রস্তাবনা

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-লীচের প্রস্তাবনা

লীচের প্রস্তাবনা

উপরের স্তরে একটি বাক্যের অর্থের বিশ্লেষণকে বলা যেতে পারে উপরি বাগধিক সংগঠन । গভীর স্তরে এই সংগঠন আবার এক বা একাধিক বাগার্থিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারে অথবা বিপরীত হতে পারে। এটি হলো গভীর বাগধিক সংগঠন।

এখানে, D.S.S. গভীর বাগধিক সংগঠন = S.S.S. – উপরি বাগার্থিক সংগঠন

এভাবে জেফ্রি লীচ (১৯৮১ : ২৬৮-২৭৬) বাগার্থিক সংগঠনকে দুটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করেন রূপান্তরবাদী বাক্য তত্ত্বের ঢংয়ে। লীচ তার প্রস্তাবনা একটি প্রকল্পাকারে প্রকাশ করেন যার নাম দেন তিনি গভীর বাসাধিক সংগঠন প্রকল্প এবং তিনি তার তত্ত্বালোচনাকে পতীর বাগধবিদ্যা অভিধায় ভূষিত করেন।

লীচের মতে গভীর বাগধিক সংগঠন হলো বাগধিক উপদানের জালিকা যা গঠিত হয় প্রাপ্ত ও বন্ধন দ্বারা । জালিকা প্রদর্শিত হয় লেখচিত্রে যাতে থাকে প্রান্ত উপস্থাপনার জন্য বৃত্ত এবং বন্ধন উপস্থাপনার জন্য সরলরেখা তীরচিহ্ন । লীচ দাবি করেন গভীর বাগার্থিক সংগঠনে বিভিন্ন ধরনের বিধেয়নসহ সহনির্দেশন, প্রতিবিম্ব সম্পর্ক প্রভৃতি বিশ্লেষন করা যায়। এক স্থানিক বিধেয়নের ক্ষেত্রে বন্ধনের সাথে একটিমাত্র প্রাপ্ত যুক্ত থাকে। ফলে এটি প্রদর্শিত হবে এভাবে:

 

লীচের প্রস্তাবনা

 

বিস্থানিক বিধেয়নের ক্ষেত্রে বন্ধন দুটি প্রাপ্তকে একসাথে যুক্ত করে। এটি প্রদর্শিত হয় এভাবে :

এখানে তীরচিহ্নের অভিমুখের গুরুত্ব রয়েছে । উপরের চিত্রে তীরের অভিমুখ বিপরীত হলে তার অর্থ হবে

মানুষ বাঘ খায় :

লীচের প্রস্তাবনা

 

যদি একটি বিধেয়ন অন্য একটি বিষেয়নের অধীনস্থ নয় তবে একটি তীরচিহ্নের প্রাপ্ত আরেকটি তীরচিহ্নের মাঝামাঝি স্পর্শ করবে। এতে লেখচিত্রটি দেখাবে কাত হওয়া T অক্ষরের মতো। যেমন :

 

লীচের প্রস্তাবনা

 

বিশেষণমূলক বিধেয়নের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ এখানেও দুইটি তীরচিহ্ন পরস্পরের সাথে যুক্ত হয় যার ফলে চিত্রটি দেখতে অবিকল T এর মতো।

সম্বন্ধপদের ক্ষেত্রে লেখচিত্রটি উল্টো L এর আকার ধারণ করে। সহনির্দেশনের ক্ষেত্রে দুটি বৃত্ত একই চক্রে আবদ্ধ থাকে। দুটি বৃত্তের একটিতে একটি যুক্তি এবং অপরটিতে অন্য যুক্তির সাম্পর্কিক বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রতিবিম্ব সম্পর্কের ক্ষেত্রে তীরচিহ্ন তার উৎস্যবৃত্তে প্রত্যাবর্তন করে।

জালিকাচিত্রে এভাবে অনেক জটিল সম্পর্ক ও প্রদর্শন করা সম্ভব। যেমন :

 

লীচের প্রস্তাবনা

লীচ তার গভীর বাগর্থবিদ্যাকে বৃহত্তর তাত্ত্বিক সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস পান। তিনি বৃহত্তর তাত্ত্বিক সংগঠনটি উপস্থাপন করেন ব্যাখ্যামূলক বাগর্থবিদ্যা ও সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যার মধ্যে আপোষ মীমাংসাস্বরূপ । তার মতে এরূপ একটি ভাষিক তত্ত্ব হবে তিন প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট ঃ

একটি প্রকোষ্ঠ বাক্যতত্ত্বের একটি বাগর্থতত্ত্বের এবং তৃতীয়টি ধ্বনিতত্ত্বের । প্রতিটি প্রকোষ্ঠ আবার উপরি ও গভীর এই দুই স্তরে বিভক্ত থাকবে । ফলে বাক্যতত্ত্ব বিভক্ত হবে গভীর ও উপরি বাক্যতত্ত্বে বাগর্থবিদ্যা বিভক্ত হবে গভীর ও উপরি বাগর্থবিদ্যায় এবং ধ্বনিতত্ত্ব

বিভক্ত হবে গভীর ও উপরি ধ্বনিতত্ত্বে। তিনটি প্রকোষ্ঠেই রূপান্তরমূলক নিয়ম কার্যকরী হবে, তবে বাগর্থবিদ্যা ও বাক্যতত্ত্ব এই দুই প্রকোষ্ঠের সংযোগে কাজ করবে প্রকাশমূলক নিয়ম । বাগর্থবিদ্যা প্রকোষ্ঠের ভিতরে আবার গভীর ও উপরি স্তর সম্পর্কিত হবে ইঙ্গিতের নিয়ম দ্বারা ।

লীচের প্রস্তাবনা

ভাষিক তত্ত্বের পরিকাঠামোর এক প্রান্তে থাকবে জ্ঞানাত্মক সত্তার আগম বা নির্গম পথ এবং অন্য প্রান্তে থাকবে ধ্বনিবৈজ্ঞানিক সত্তার আগম বা নির্গম পথ। চ তার তত্ত্বকে নিম্নরূপ চিত্রে প্রদর্শন করেন (১৯৮১ : ৩৫০) :

লীচ দেখান যে তার তত্ত্বে ব্যাখ্যামূলক ও সঞ্জননী উভয় বাগর্থ-বিদ্যার কিছু কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত আছে। ফলে তিনি আশা করেন তার এই বহুভিত্তিক মডেল উভয়ের মধ্যে তীব্র বিতর্কের অবসান ঘটাবে ।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment