আরবি ডায়ালগ (নাটক) বৈশিষ্ট্য ও শিখন-শেখানো পদ্ধতি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি ডায়ালগ (নাটক) বৈশিষ্ট্য ও শিখন-শেখানো পদ্ধতি – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষণের পাঠদান পদ্ধতি ও কলাকৌশল এর অন্তর্ভুক্ত।

আরবি ডায়ালগ (নাটক) বৈশিষ্ট্য ও শিখন-শেখানো পদ্ধতি

 

আরবি ডায়ালগ (নাটক) বৈশিষ্ট্য ও শিখন-শেখানো পদ্ধতি

 

কাব্য প্রিয় আরবদের প্রাচীন সাহিত্যে নাটকের উম্মেষ ঘটেনি। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সেনাপতি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট-এর মিসর আগমনের পর থেকে আরবি সাহিত্যে রেনেসাঁ যুগের শুরু। এ সময় থেকে আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় আধুনিকতার লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। আধুনিক আরবি কবিতা ও গদ্য রীতির পথ ধরে যাত্রা শুরু হয় আরবি নাটকের।

উনবিংশ শতাব্দির পঞ্চম দশকে লেবাননে ইউরোপীয় সাহিত্যের অনুবাদের মাধ্যমে আরবি সাহিত্যে নাটকের উৎপত্তি হয়। মারুন নাক্কাশের হাতে এ পদক্ষেপের সূচনা । তিনি ফরাসি নাট্যকার মলিয়ের-এর নাটক আরবিতে অনুবাদ করে البخيل নাম দিয়ে ১৯৪৭ সালে পারিবারিক সদস্য ও বন্ধু বান্ধবদের সহযোগিতায় নিজ গৃহে নাটকটি মঞ্চস্থ করেন। এটিই আরবি সাহিত্যের প্রথম নাটক।

এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন নাট্যকারের অবদানের মাধ্যমে আরবি নাটক শিল্পগত উৎকর্ষ ও বিষয়গত ব্যাপ্তির দিক থেকে দ্রুত অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায়। নাটকের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হলো সংলাপ। আমাদের দেশে মাদরাসা শিক্ষার দাখিল স্তরের সিলেবাসে পরিপূর্ণ আরবি নাটক অন্তর্ভূক্ত না থাকলেও আরবি ভাষার দক্ষতা অর্জনের জন্য আরবি ডায়ালগ পাঠদান করা হয়। এই পাঠে আরবি নাটকের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আরবি ডায়ালগ পাঠদানের কলাকৌশল অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

নাটক

নাটক-এর আরবি প্রতিশব্দ مسرحية। এর ক্রিয়ামূল سرح যার অর্থ চলে যাওয়া, বেরিয়ে যাওয়া, বিচরণ করা । স্থানবাচক বিশেষ্য হিসেবেمسرح ব্যবহৃত হয়। যার অর্থ চারণভূমি, বিচরণস্থল, রঙ্গমঞ্চ, নাট্যশালা প্রভৃতি । পরিভাষায়; অর্থাৎ মঞ্চে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মাধ্যমে সংঘটিত ক্রিয়াকর্মের দ্বারা যে কাহিনীর শিল্পময় ধারা বিবরণীর প্রতিচ্ছবি প্রত্যক্ষ করা যায় তাকে নাটক বলে।

মাজদি ওয়াহবা মুজামু মুসতালাহাতিল আদাব গ্রন্থে বলেন, যে সাহিত্যকর্মে পদ্য কিংবা গদ্যের ভাষায় কতিপয় চরিত্রের বা কোনো কাহিনীর ঘটনা প্রবাহ সংলাপাত্মক ভঙ্গিতে মঞ্চের সাহায্যে উপস্থাপিত হয়, তাকে নাটক বলে। El;izabeth Drewবলেন; Drama is the creation and representation of life in terms of the theatre. সহজভাবে বলা যায়, মানব জীবনের কাহিনী যখন সংলাপ ও অভিনয়ের মাধ্যমে দৃশ্যমান করে শৈল্পিক কাঠামোতে মূর্ত করে তোলা হয়, তখন তাকে নাটক বলে।

ডায়ালগ/সংলাপ

ডায়ালগ-এর আরবি প্রতিশব্দ الحوار। এর অর্থ সংলাপ, আলোচনা, কথোপকথন। মাজদি ওয়াহবা মুজামু মুসতালাহাতিল আদাব গ্রন্থে বলেন;

অর্থাৎ, حوار হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে মৌখিক বাক বিনিময়।

নাটকের অন্যতম উপাদান হলো সংলাপ। নাটকে জীবনের হাসি কান্না, সুখ দুঃখ বা প্রতিদিনের ঘটনাকে শৈল্পিক অভিব্যক্তি বা চরিত্রসমূহের সংলাপের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তোলা হয় এবং সেটা জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়। সে জন্যই নাটককে দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্যের সমন্বিত রূপ বলা হয়েছে। আমাদের দেশের মাদরাসায় দাখিল স্তরের আরবি শিক্ষাক্রমে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দিককে কেন্দ্র করে বা ডায়ালগ সংযোজন করা হয়েছে।

আরবি নাটকের বৈশিষ্ট্য

  • নাটক মানব জীবনের সুদৃশ্য রূপায়ন। দর্শন ও শ্রবন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বলে নাটককে একই সাথে দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য বলা হয় ।
  • নাটকের মধ্যে নাট্যকারের বলিষ্ঠ জীবনবোধ, জীবনদর্শন ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
  • সংলাপ ও নাটকীয়তা হলো নাটকের প্রাণ। নাটকের আখ্যানভাগকে ভিত্তি করে কুশীলবদের চরিত্রও
  • সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটকের নাটকীয়তা সৃষ্টি করা হয়।
  • সার্থক নাটকে পাঁচটি অঙ্ক থাকে।
  • অভিনেতারা সংলাপ উচ্চারণ ছাড়াও অঙ্গভঙ্গিসহ বিভিন্ন কৌশলে নাটকের ঘটনাকে জীবন্ত করে তোলেন । তাই নাটক হলো- Imitation of life |
  • নাটকে পাঁচটি অঙ্ক পরম্পরায় প্রারম্ভ, প্রবাহ, উৎকর্ষ, গ্রন্থিমোচন এবং উপসংহার এ পাঁচটি পর্যায়ে ঘটনা বিন্যস্ত থাকে ।

শ্রেণিতে ডায়ালগ পাঠদানের উদ্দেশ্য

  • দৈনন্দি জীবনে ব্যবহার্য আরবি শব্দের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করা।
  • নতুন নতুন বিষয়ে আরবি বাক্য গঠনের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
  •  শিক্ষার্থীদের আরবি কথোপকথনে সামর্থ্য করে তোলা।
  • আরবিতে বিতর্ক করার দক্ষতা অর্জন করা।
  •  শ্রেণি কক্ষ ও বাইরে ব্যবহারিক জীবনে শিক্ষার্থীদের আরবি চর্চায় উৎসাহিত করা।
  • চাকরি, ব্যবসা, রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আরবিতে সাক্ষাৎকার প্রদানে যোগ্য করে তোলা।
  • আরবি সাহিত্যের বৈচিত্র্যময় ধারা ও রূপ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া।
  • আরবি ভাষাকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা ।
  •  শিক্ষার্থীদের আরবি নাটক পাঠে উৎসাহিত করা ।
  • আরবি নাট্য সাহিত্য ও নাট্যকারগণের সাথে পরিচিত করা।

আরবি ডায়ালগ (নাটক) পাঠদান পদ্ধতি

কবিতা, গল্প, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের অন্যান্য শাখা পাঠদানের চেয়ে ডায়ালগ/নাটক পাঠদান পদ্ধতি একটু ভিন্নতর। শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ডায়ালগ/নাটক পাঠদান প্রক্রিয়া সফল হতে পারে। শিক্ষক শ্রেণিতে ডায়ালগ/নাটক পাঠদানে নিম্নরূপ অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।

 

আরবি ডায়ালগ (নাটক) বৈশিষ্ট্য ও শিখন-শেখানো পদ্ধতি

 

উদ্দেশ্য সচেতনতা:

শ্রেণিকক্ষে যে কোনো বিষয় পাঠদানের পূর্বে শিক্ষকের প্রধান কর্তব্য হলো ঐ পাঠটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া। আরবি ডায়ালগ পাঠদানের ও কিছু স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য আছে। এ উদ্দেশ্যগুলো সম্পর্কে শুরুতেই শিক্ষককে জেনে নিতে হবে এবং এ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য শ্রেণিকক্ষে উপযুক্ত কার্যক্রমের আয়োজন করতে হবে।

পাঠ ঘোষণা: নাটকীয়ভাবেই প্রসঙ্গের অবতারণা করে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে তথ্য নিয়ে পাঠ ঘোষণা করবেন।

শীর্ষ ভাগকরণ:

পুরো ডায়ালগ/নাটকটি যদি একটি পিরিয়ডে পাঠদান সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে সেটিকে প্রয়োজনীয় অংশে ভাগ করে নিতে হবে। এবং সে অনুযায়ী পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

আদর্শ পাঠ:

আরবি যেহেতু আমাদের জন্য একটি বিদেশী ভাষা তাই এ ভাষার পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ডায়ালগ/নাটক-এর নির্বাচিত অংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শুদ্ধ উচ্চারণে যথাযথ ভঙ্গিতে পাঠ করবেন।

শব্দার্থ শিক্ষণ:

শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ডায়ালগটি থেকে অপরিচিত ও কঠিন শব্দগুলো চিহ্নিতকরবেন এবং সেগুলোর অর্থ বোর্ডে উপস্থাপন করবেন ও প্রয়োজনীয় অনুশীলন করাবেন।
অনুবাদ শিক্ষক প্রথমে ২/৩ মিনিটের মিনি লেকচারের মাধ্যমে পাঠ্যাংশটির অনুবাদ এবং পাঠের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরবেন। এতে শিক্ষার্থীরা পঠিত অংশটির অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে।

ভূমিকাভিনয়:

এটিই ডায়ালগ/নাটক পাঠদানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। শিক্ষক এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জোড়া/দল গঠন করে দিয়ে চরিত্র ভাগ করে দিবেন। শিক্ষার্থীরা জোড়ায়/দলে ডায়ালগটি প্রথমে বই দেখে পড়ে অনুধাবন করবে, অতঃপর বই না দেখে ডায়ালগ বলবে এবং অভিনয় করবে। এরপর জোড়া/দল পুনর্বিন্যাস করে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ডায়ালগ বলা ও অভিনয়ে অংশগ্রহণ করাবেন।

ডায়ালগ পরিবর্তন:

শিক্ষক ডায়ালগটির শব্দ/বাক্য-এর প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে বোর্ডে নির্দেশনা লিখবেন এবং জোড়া/দল গঠন করে পরিবর্তিত ডায়ালগ অনুশীলন করাবেন।

দলগত কাজ:

এবার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দলে ভাগ করবেন এবং পাঠের নির্ধারিত অংশ থেকে ভাষা/ব্যাকরণগত সমস্যা নিয়ে চিন্তনমূলক কাজ দিবেন। শিক্ষার্থীরা কাজ শেষে দলে উপস্থাপন করবে এবং শিক্ষক প্রয়োজনীয় ফলাবর্তন দিবেন

মূল্যায়ন:

পাঠের শিখনফল অর্জিত হয়েছে কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষক বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন।

উল্লেখ্য, শিক্ষকের আরবি সংলাপ উচ্চারণ ও অভিনয়ের দক্ষতা না থাকলে আরবি ডায়ালগ পাঠদানের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। তাই শিক্ষককে বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে অঙ্গভঙ্গি, বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, কণ্ঠস্বরের প্রক্ষেপন প্রভৃতির আদর্শমান ঠিক রেখে আরবি ডায়ালগ/নাটক পাঠদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

 

আরবি ডায়ালগ (নাটক) বৈশিষ্ট্য ও শিখন-শেখানো পদ্ধতি

 

মূল্যায়ন

১. নাটক কাকে বলে? আরবি নাটকের উপাদান উল্লেখ করুন।
২. আরবি নাটকের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন।
৩. শ্রেণিকক্ষে আপনি কীভাবে আরবি ডায়ালগ পাঠদান করবেন?

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment