আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শিক্ষা উপকরণ উন্নয়ন: বিবেচ্য বিষয়সমূহ – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষণে শিক্ষা উপকরণ এর অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষা উপকরণ উন্নয়ন: বিবেচ্য বিষয়সমূহ
শিক্ষা উপকরণ উন্নয়নের ধারণাগত দিক
বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একজন দক্ষ বা আদর্শ শিক্ষক তার পাঠদান প্রক্রিয়াকে শিক্ষার্থীদের জন্য মনোযোগী ও আকর্ষণীয় করে তুলতে অনেক সহায়ক সামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন। সব সময় এ সকল শিক্ষা সামগ্রী একই রকম বা সব পরিবেশে উপস্থাপন সামঞ্জস্য বা আনন্দময় নাও হতে পারে।
সময়ের পরিক্রমায় শ্রেণিকক্ষে এ সকল সহায়ক সামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। Teaching Aidsবা শিক্ষাউপকরণ এর মান পরিবর্তন বা ধরন পরিবর্তন করে আমরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও মনোমুগ্ধকর করে তুলতে পারি। শিক্ষার্থীদের আকাঙ্খা বা চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া বা বিষয়টিকে আরও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য উপকরণসমূহ হতে হবে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী।
এক সময় মানুষ গাছের পাতা, বাকল, পাথর, চামড়া, কাঠ ইত্যাদিতে লিখতো। সময়ের পরিবর্তন ও শিল্পের উন্নতির কারণে নানান রকম কাগজ বা কাগজ সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার তদ্রূপ আমরা বলতে পারি এক সময় বাঁশের কঞ্চি বা পাখির পালক ইত্যাদি কলম হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
সভ্যতার পরিবর্তন ও সুবিধার সহজ লভ্যতার কারণে আজ নানান রকম ও নানান ধরনের কলম আমরা ব্যবহার করে থাকি। আমাদের ব্ল্যাক বোর্ড-এর জায়গায় আজ হোয়াইট বোর্ড এবং চক-ডাস্টার-এর জায়গায় মার্কার কলম আমরা ব্যবহার করছি। বর্তমানে বৃহদাকার শ্রেণিকক্ষে মাইক ব্যবহার, প্রয়োজনে অডিও-ভিডিও-এর ব্যবহার এমনকি অনেক Programme আমরা শ্রেণিকক্ষে পরিবেশন করছি। যত রকম সুবিধা দেয়া বা গ্রহণ করা সম্ভব আমরা সবই করছি।
এই পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী পরিবর্তন বা ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষা উপকরণের উন্নয়নে । বর্তমান Covid- 19 বা করোনা মহামারীতে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্বের সকল দেশ ডিজিটাল শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যদি উপকরণের উন্নয়ন না করা হতো তাহলে ডিজিটাল মাধ্যমে বা Online-এ ক্লাস নেওয়া সম্ভব হতো না।
শিক্ষা উপকরণ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা
- সমসাময়িক উপকরণ-এর সাথে পরিচিতির জন্য। পাঠদানের আধুনিক সহায়ক সামগ্রী উপস্থাপন বা ব্যবহার।
- সময়ের দাবি অনুযায়ী সশরীরে উপস্থিত না থেকেও অনলাইন পাঠদান প্রক্রিয়া চলমান রাখা।
- শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রদান করা।
- পাঠদান প্রক্রিয়ায় কোনো অজুহাত এর কারণে বিঘ্ন না ঘটানো। পুঁথিগত বিদ্যায় আটকে না রেখে বাস্তব প্রয়োগমূলক জ্ঞান দান করা।
- শিক্ষার্থীদের বিশ্বের চাহিদা মাফিক তৈরি করা ও মানসম্মত জ্ঞান বিতরণ করার মাধ্যমে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা।
- শিক্ষককে সময়োপযোগী উপকরণের সাথে প্রস্তুত করা। পাঠ প্রক্রিয়া সহজবোধ্য ও মনোযোগ আকর্ষণ করা।
- মানসম্মত পাঠদানে সদা প্রস্তুত থাকা এবং শিক্ষার্থীদের উপকরণের উন্নয়নের সাথে পরিচয় করার পাশাপাশি অভ্যস্ত করা।
শিক্ষা উপকরণ উন্নয়নের বিবেচ্য বিষয়সমূহ
সময়ের চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তাই মানুষকে নতুনভাবে তৈরি হতে বা তৈরি করতে বাধ্য করে। শিক্ষা উপকরণ উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা চলমান থাকবে অনন্তকাল। প্রয়োজনের তাগিদেই পরিবর্তন- পরিবর্ধন, নতুন-নতুন সংযোজন, বিয়োজন আমরা দেখতে পাব।
শিক্ষা উপকরণ উন্নয়নে আমাদেরকে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে-
১. পাঠ্য বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
২. পাঠ্য বিষয়ের সাথে কোনোভাবে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারবে না।
৩. শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ ও আনন্দময় হয় এমন উপকরণ হতে হবে।
৪. উপকরণ এর সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ধারণা থাকা আবশ্যক ।
৫. এমন উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না, যা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ।
৬. সকল শিক্ষার্থী যেন অংশগ্রহণ করতে পারে, সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৭. অপরিচিত কোন উপকরণ হলে শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ধারণা ও উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।
৮. উপকরণ এর সহজলভ্যতা বিবেচনা করতে হবে।
৯. দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল, অপ্রচলিত উপকরণ ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
১০. উপকরণ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
১১. ডিজিটাল উপকরণ সম্পর্কে ধারণা ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানানো এবং উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
১২. অপ্রচলিত কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হলে তার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা প্রদান করে-এর উপকারিতা সম্পর্কে জানাতে হবে।
১৩. স্থান, কাল, সময় ও আর্থিক সঙ্গতি বিবেচনা করে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা আবশ্যক ।
১৪. কোনো উপকরণ যাতে শিক্ষার্থীদের মনে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি না করে ।
১৫. শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ যেন বৃদ্ধি না পায় ।
১৬. শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হতে সাহায্য করে এমন উপকরণ ব্যবহারে মনোযোগী হওয়া ও বাস্তবায়ন করা দরকার।
১৭. যে উপকরণটি তৈরি বা ব্যবহার হবে, শিক্ষার্থীদের কতটুকু উপকারে আসবে তা বিচেনা করতে হবে।
১৮. কোন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উপকরণ তৈরি হচ্ছে, শিক্ষার্থীর বয়স, পূর্বজ্ঞান, শিক্ষা গ্রহণের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা, আগ্রহ ইত্যাদি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
১৯. উপকরণ-এর কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য কিনা, বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে পাওয়া সম্ভব কিনা।
২০. এমনভাবে শিক্ষাপোকরণটি উপস্থাপন করতে হবে যেন শ্রেণিকক্ষের সকল শিক্ষার্থী দেখতে পায়, শেষ বেঞ্চে বসা শিক্ষার্থী ও সামনের সারিতে বসা শিক্ষার্থীর মতো দেখতে পায় ।
২১. পাঠের একঘেয়েমি দূর করা।
২২. শিখনফল ফলপ্রসূ ও স্থায়ী করা।
২৩. শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও চিন্তাশীল করে গড়ে তোলা ।
২৪. অধিক পরিমাণে বিষয়ের সাথে সমন্বিত নয় এমন বিষয় সন্নিবেশন না করা । ২৫. কাঠিন্য বর্জন করে সহজ উপস্থাপন এবং অর্থ পূর্ণ করা ।
আরও দেখুনঃ