আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ, ব্যবহার ও সংরক্ষণ – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষণে শিক্ষা উপকরণ এর অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ, ব্যবহার ও সংরক্ষণ
শিখন সামগ্রীর প্রকারভেদ উপস্থাপন
বর্তমানেInformation Highway-এর যুগে শিখন-শেখানো সামগ্রী বা Teaching Aids-এর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নিত্য নতুন উপকরণ। ১৯৮৫ সালে দার্শনিক Henry Ellington Phil Race প্রযুক্তিগত পার্থক্যের দিক থেকে শিখন সামগ্রীগুলোকে নিম্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।
১. মুদ্রিত উপকরণ ও শ্রুতিলিপি;
২. অপ্রক্ষেপিত প্রদর্শন;
৩. স্থির প্রক্ষেপিত প্রদর্শন;
৪. শ্রবণ উপকরণ।
৫. শ্রবণ যুক্ত স্থির দর্শন উপকরণ;
৬. দর্শন উপকরণ;
৭. ICT Basedউপকরণ।
শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ
পৃথিবীর সকল দেশেই শিক্ষার প্রথম উপকরণ হলো পাঠ্য পুস্তক। শিক্ষার্থীর প্রচণ্ড আগ্রহ সৃষ্টির সাথে পাঠের অভ্যাস গঠনে পাঠ্যপুস্তক এর গুরুত্ব অপরিসীম। কোমল হৃদয়ে প্রথমেই দোলা দেয় পাঠ্যপুস্তক। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও শিখনফলকে অর্থবহ, সৃজনশীল ও স্থায়ী করার মানসে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠের সহায়ক অনেক দ্ৰব্য সামগ্রী উপস্থাপন বা ব্যবহার করেন। এই সহায়ক সামগ্রী নানান উপায়ে সংগ্রহ করা হয়।
১. স্থানীয়ভাবে পাওয়া সহজলভ্য উপকরণ, যা আমাদের চারপাশে অনেক কিছু থেকেই পেতে পারি।
২. স্থানীয়ভাবে তৈরী উপকরণ।
৩. স্বল্পমূল্যে বা প্রয়োজনে বেশি মূল্যে ক্রয়কৃত উপকরণ
৪. দৃশ্য উপকরণ: যেমন— বই, পোস্টার পেপার, ডিপকার্ড, বিভিন্ন গাছ-গাছালির অংশ বিশেষের ছবি, চিত্র, ফুল, ফল-মূল ইত্যাদি সংগ্রহ করা।
৫. শ্রব্য উপকরণ: যেমন- মোবাইল, রেডিও, টেপ রেকর্ডার, গ্রামোফোন ইত্যাদি।
৬. দৃশ্য-শ্রব্য উপকরণ: যেমন— মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, সিনেমা, নাটক ইত্যাদি।
৭. বিভিন্ন নকশা, চিত্র, মানচিত্র ইত্যাদিও উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার
শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রমে পাঠদান প্রক্রিয়াকে আকর্ষণীয়, সবার জন্য ফলপ্রসূ, সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য শিক্ষা উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। কোনো বিষয়কে যেন শিক্ষার্থীরা কঠিন বা দুর্বোধ্য মনে না করে। উপকরণ ব্যবহারের ফলে তাদের বিরক্তি দূর হয়ে আনন্দের সাথে পাঠে মনোযোগ সৃষ্টি করে।
অনেক সময় বক্তৃতা বা লেকচার-এর মাধ্যমে একটি বিষয় ভালোভাবে বোঝানো কঠিন হয়। তাই উপকরণের ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই তা বোধগম্য করতে পারে। আরবি ভাষা আয়ত্ত করার জন্য যদি ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে তাদের কথোপকথন দেখানো হয়, তাহলে তাদের বলার ভঙ্গি ও উচ্চারণ সহজে শিক্ষার্থীরা আয়ত্ত করতে পারবে। এতে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি আত্মস্থ করার সাথে সাথে আনন্দও পাবে ।
বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং মানবিক বিভাগের বিভিন্ন বিষয় উপকরণের ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা সে বিষয়টি আত্মবিশ্বাসের সহিত উপলব্ধি করতে পারে। বর্তমান প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এমন অনেক উপকরণ (যা আগে কঠিন ছিল) ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বিষয়টির গভীরে মনোনিবেশ করতে পারি।
একটি শ্রেণিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানান সামর্থ্যের শিক্ষার্থী থাকে। অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী একীভূতভাবে (Inclusive Education)শিক্ষা অর্জন করতে পারে। যার যা চাহিদা তা সম্পন্ন করা সম্ভব
একমাত্র সঠিক উপকরণের ব্যবহারের মাধ্যমে। সকল শিক্ষার্থীর পাঠ গ্রহণ করার সামর্থ্য একই রকম হতে পারে না। যদি পাঠদানে উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাহলে সকল শিক্ষার্থীর সামর্থ্যের উন্নতি ঘটে। পুঁথিগত বিদ্যায় আটকে না থেকে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী ও জাতি তৈরি করার মানসিক সামর্থ্য অর্জন করে।
শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণ
শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণ আবশ্যক। উপকরণের শ্রেণিভেদে আমরা সহজলভ্য, স্বল্পমূল্য বা দুর্মূল্যের উপকরণ পেয়ে থাকি। এর মধ্যে কিছু পঁচনশীল, অস্থায়ী, স্থায়ী উপকরণও আছে। হাতের কাছে সহজে পাওয়া প্রকৃতি থেকে উপকরণ আমরা সহজেই পেয়ে থাকলেও সব সময় যেন সঠিক ভাবে উপকরণ শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করতে পারি তার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
১. পঁচনশীল উপকরণ সঠিক বা যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা।
২. যে সকল উপকরণ শুষ্ক জায়গা রাখা দরকার, তা সঠিকভবে সংরক্ষণ করা।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গাতে রাখতে হবে।
8. ICT Based Digital Aidsযথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আবশ্যক। যেমন- অনেক ভিডিও, ছবি, ডকুমেন্ট, অনুষ্ঠান ইত্যাদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা নষ্ট বা হারিয়ে যেতে পারে। সামান্য অবহেলায় মূল্যবান উপকরণ সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে না পারলে ক্ষতিটা আমাদেরই। তাই Digital Aidsগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ জরুরি।
৫. অনেক দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান ছবি, চিত্র, নকশা ইত্যাদি দুর্লভ হওয়ার কারণে এগুলোর চাহিদাও অনেক। এগুলো সঠিক জায়গায় সংরক্ষণ করলে ইঁদুর বা পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
৬. মাটির তৈরি তৈজষপত্র বা যে কোন দ্রব্য, বস্তু যখন উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এগুলো যত্ন করে সংরক্ষণ করা আবশ্যক ।
শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ, ব্যবহার ও সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাঠদানে উপকরণের ব্যবহারকে মনোমুগ্ধ করে আত্মবিশ্বাসী একজন শিক্ষার্থী তৈরি করা সম্ভব। যাতে করে টেকসই গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। সংগ্রহ ব্যবহার ও সংরক্ষণ এর প্রতিটি ধাপেই অত্যন্ত যত্নসহকারে ব্যবহার করা উচিত।
আরও দেখুনঃ