ইলমে নাহুর বিশ্লেষন: ইলমে নাহু শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ইলমে নাহুর বিশ্লেষন: ইলমে নাহু শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি – যা শিক্ষার্থীর আরবি ভাষার কাওয়ায়েদ এর অন্তর্ভুক্ত।

ইলমে নাহুর বিশ্লেষন: ইলমে নাহু শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি

 

ইলমে নাহুর বিশ্লেষন: ইলমে নাহু শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি

 

ভূমিকা

আরবি ব্যাকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো – علمالنحو তথা বাক্যবিন্যাস শাস্ত্র। এই শাস্ত্র অধ্যয়নের মাধ্যমে আরবি বাক্য গঠনের নিয়মাবলি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আরবি প্রবাদে আছে,النحوفيالكالمكالملحفيالطعام  অর্থাৎ খাবার সুস্বাদু হওয়ার জন্য লবণ যেমন প্রয়োজন, আরবি বাক্য শুদ্ধ হওয়া জন্য নাহু তেমনই প্রয়োজন। আরবি ভাষা শিক্ষা ও শিক্ষণে নহু শাস্ত্রের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

ইলমে নাহু-এর পরিচয়

আরবি দুটি শব্দের মিলনে গঠিত হয়েছে “ইলমুন-নাহু’ (علمالنحو) সম্বন্ধ পদটি। ইল্ম (علم) অর্থ— কোনো কিছু জানা ও উপলব্ধি করা; এখানে ইলম (علم) অর্থ- শাস্ত্র। আর النحو শব্দের আভিধানিক অর্থ القصدواإلرادة ইচ্ছা কারা ও সংকল্প করা; তা ছাড়া শব্দটি পথ, মতো, উদাহরণ, পরিমাণ, পরিমাপ, দিকে, নিক্ষেপ প্রভৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়েথাকে। ইলমে নাহু-এর সংজ্ঞায়মুহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন:

অর্থাৎ علمالنحو এমন কিছু নিয়ম জানার নাম, যা দ্বারা معرب  ও  مبني হওয়ার দিক থেকে তিনটি কালেমা (اسمفعلحرف )-এর শেষের অবস্থা এবং এক কালেমার সাথে অন্য কালেমা (এক শব্দর সাথে অন্য শব্দ) সংযোজনের মাধ্যমে বাক্য গঠন করার পদ্ধতি অবহিত হওয়া যায়।

এখানে শব্দের শেষের অবস্থা মানে হচ্ছে— শব্দের শেষে যের, যবর, পেশ ইত্যাদি কোনটা হবে, তা জানা যায় । আমরা একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করব :

مرواْ عَ دٌيْزَ ضرب  এই বাক্যটির উচ্চারণ হলো- দারাবা যায়দুন আমরান। ‘দারাবা بَ ض নিয়েসরফ শাস্ত্রের মধ্যে আলোচনা করা হবে, কারণ ‘দারাবা (ضرب) হচ্ছে ফে’ল (فعل) বা ক্রিয়া। উক্ত বাক্য থেকে প্রশ্ন হচ্ছে-

(دٌيْز) শব্দের শেষে কেন পেশ হলো?
(واًمرْ ع) শব্দের শেষে কেন যবর হলো?

১ নম্বরের উত্তর হচ্ছে- دٌيْز (যায়দু) শব্দটি ফে’ল-এর ফায়েল বা কর্তা; আর আমরা জানি, ফায়েল (فاعل) সর্বদা মারফু বা পেশ হয়; এ রকম পেশ হওয়ার মতো বিষয়আছে- ৮টি। এগুলোকে মারফুআত (مرفوعات) বলা হয়।

আবার ২ নম্বরের উত্তর হচ্ছে।واًمرْ ع (আমরান শব্দটি হচ্ছে, ضرب ফেল-এর মফউল (مفعول); অর্থাৎ এ ফায়েল (دٌيْز) বা কর্তার কাজটি। আর আমরা জানি, মফউল সর্বদ মনসুর বা যবর বিশিষ্ট হয়; এ রকম যবর হওয়ার মতো বিষয়আছে- ১২টি। এগুলোকে মানসুবাত  বলা হয়।

ইলমে নাহু-এর আলোচ্য বিষয়

বাক্যে ব্যবহৃত একক ও যৌগিক শব্দাবলীই হলো -এর আলোচ্য বিষয়।  “ইলমে নাহু-এর আলোচ্য বিষয়হলো-শব্দ ও বাক্য। ও এরাব, তারকীব, রীতি-পদ্ধতি।

নাহু শিক্ষার উদ্দেশ্যসমূহ

(১) শিক্ষার্থীদেরকে আরবি ভাষা ভালোভাবে ব্যক্ত করতে শেখা, ভাষায়রুচি আনয়ন এবং সঠিক ফলাফল প্রদানে প্রশিক্ষণ দেওয়াই হলো— নাহু শিক্ষার উদ্দেশ্য। علمالنحو শিক্ষার মাধ্যমে নির্ভুলভাবে আরবি ভাষা পড়া, বলা ও লেখার যোগ্যতা অর্জন করা যায়। ইলমে নাহু শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে হেদায়াতুন নাহু গ্রহকার বলেন:

“আরবি ভাষার শাব্দিক ভুলভ্রান্তি থেকে মেধাকে রক্ষা করাই علمالنحو শিক্ষার উদ্দেশ্য। مرجعالطالب এ গ্রন্থকার বলেন:

১. “বাক্য গঠন ও প্রণয়নের ক্ষেত্রে বক্তা এবং লেখককে ভুল থেকে রক্ষা করাই ইলমে নাহু শিক্ষার উদ্দেশ্য”।

২. আরবি শব্দের প্রকারভেদ তথা ইসম বা বিশেষ্য, ফে’ল বা ক্রিয়া এবং হরফ বা অব্যয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা।

৩. শুধুমাত্র আলাদাভাবে আরবি ভাষায় ক্রিয়াবাচক শব্দগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া। সেগুলো হল: অতীত, বর্তমান, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকাল ও আমর বা আদেশ সূচক বাক্য।

৪. শুধুমাত্র পৃথকভাবে আরবি নামবাচক শব্দগুলো (اسم) সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- সংখ্যা বাচক শব্দের প্রকার বলতে বলা যায় এর একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন সম্পর্কে জানা।

৫. (فعل ) ক্রিয়া, (فلعه) কর্তা ও (فعول) কর্ম-এর ব্যবহার বিধি সম্পর্ক জানা ।

৬. المرفوعاتوالمنصوباتوالمجرورات  ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণঙ্গ জ্ঞান অর্জন করা।

 

ইলমে নাহুর বিশ্লেষন: ইলমে নাহু শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি

 

ইলমে নাহু’র শিক্ষাদান পদ্ধতির শ্রেণি বিভাগ

ইলমে নাহু শিক্ষাদান পদ্ধতিতে দুটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা:

~ প্রথম অংশ: বর্ণনামূলক
~ দ্বিতীয়অংশ: বাস্তব প্রয়োগ

প্রথম অংশ: বর্ণনামূলক

“আরবি ভাষাবিদগণ মনে করেন যে, ইলমে নাহু শিক্ষা আরবি ভাষা শিক্ষার জন্য একটি বিশেষ উপায়। তবে তার প্রকৃত তথ্যানুযায়ী শিক্ষাদানে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখা একান্ত কর্তব্য।’

ক. কারিকুলাম

১. শুদ্ধ আরবি ভাষায়বলা ও লেখার দক্ষতা অর্জনের সহায়ক পাঠসমূহ (Curriculam) মূখ্য উদ্দেশ্য হওয়া আবশ্যক।
২. নাহু শিক্ষাদানের পাঠসমূহ পর্যায়ক্রমে সহজ থেকে কঠিন হওয়া বাঞ্ছনীয় । ৩. নাহু শিক্ষাদানের পাঠসমূহ একটি অপরটির সম্পূরক হওয়া দরকার ।

খ. পাঠ্যপুস্তক

১. পাঠ্যপুস্তক (Textook)-টি সম্পূর্ণরূপে সিলেবাস (Syllabus) অনুযায়ী হওয়া আবশ্যক।

২. পাঠ্যপুস্তকটির সম্পাদনা আরবি ভাষাকে কেন্দ্র করে হওয়া প্রয়োজন।

৩. অনুশীলনীসমূহ সাহিত্যরূপে বর্ণিত হওয়া দরকার।

৪. পাঠ্যপুস্তকের نصوص ইসলামিক ও সামাজিক বিষয়(Cultural) সম্বলিত হওয়া আবশ্যক ।

গ. পদ্ধতি

সাধারণত ইলমে নাহু শিক্ষাদানে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তা হলো:

১. (الطريقةالقياسية): ইলমে নাহুর যে- কোনো নিয়ম (ii) বর্ণনার পর তার ওপর উদাহরণ পেশ করাকে الطريقةالقياسية বলে।

২. (الطريقةاالستقرائية): উদাহরণ পেশ করে তার থেকে নিয়ম (sci) বের করাকে । Yall বলে।

এ পদ্ধতি দুটিই অত্যধিক গ্রহণযোগ্য। সুতরাং এ পদ্ধতিদ্বয় অনুসরণে শিক্ষকের উদাহরণ চয়ন ও শিক্ষণের সংক্ষিপ্ত তথ্য নিম্নে বর্ণিত হলো:

১. আরবি ব্যাকরণ শিক্ষাদানের জন্য উদাহরণ চয়ন করার পদ্ধতি

এই আরবি ব্যাকরণ শিক্ষাদানের জন্য উদাহরণ চয়ন করার কতিপয়পদ্ধতি বা কৌশল (Technique)-এ নিবন্ধে আলোচনা করা হলো:

শিক্ষক নিজেই উদাহরণ চয়ন করে ব্ল্যাক বোর্ড বা হোয়াইট বোর্ডে লিখবেন। • শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে নির্দিষ্ট বিষয়েউদাহরণ তৈরি করার জন্য বলবেন এবং বোর্ডে লিখবেন।

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কিছু কাজের নির্দেশ দেবেন এবং সেই কাজগুলোকে আরবিতে অনুবাদ করে বোর্ডে লিখবেন ।

শিক্ষক একটি ছোট গল্প অথবা একটি সাহিত্যিক প্যারা (অনুচ্ছেদ) বোর্ডের মাধ্যমে ছাত্রদের নিকট পেশ করবেন এবং ছাত্রদের সাথে পরস্পর পর্যালোচনার মাধ্যমে তা থেকে উদাহরণ বের করবেন।

২. উদাহরণ চয়নের বেলায়লক্ষণীয়বিষয়

দৃষ্টান্ত চয়নের বেলায়লক্ষণীয়বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

  • উদাহরণগুলো সর্বোত্তম চয়ন হিসেবে বিবেচিত হতে হবে।
  • একই অর্থে না-হয়েবিভিন্ন অর্থে হওয়া দরকার।
  • বিষয়বস্তুর সাথে পূর্ণসম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় ।
  • মনগড়া বাক্য দ্বারা গঠিত হতে পারবে না ।

৩. পাঠদানকালে লক্ষণীয়বিষয়সমূহ

পাঠদানকালে শিক্ষকের যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা কর্তব্য নিচে তা উল্লেখ করা হলো:

  • উদাহরণসমূহের ব্যাকরণিক আলোচনার পূর্বে ভাবার্থ আলোচনা করা বাঞ্ছনীয় ।
  • ইলমে নাহুর কিছু কিছু পাঠ- বাস্তব প্রয়োগ পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া উচিত
  • শিক্ষার্থীদেরকে বারংবার পর্যালোচনা (تكرار)-এর মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।
  • শিক্ষার্থীদেরকে সংশ্লিষ্ট বিষয়প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
  • প্রতিটি পাঠেই অনুশীলনী থাকা অত্যাবশ্যকীয়।

 

ইলমে নাহুর বিশ্লেষন: ইলমে নাহু শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি

 

ঘ. পরীক্ষাসমূহ

  • পরীক্ষাসমূহে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়:
  • বাক্য গঠনে এবং সঠিক হরকতদানে সহায়ক নিয়মগুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা আবশ্যক ।
  • পাঠ্যপুস্তকের হুবহু বাক্যগুলো পরীক্ষায়চাওয়া উচিত নয়।
  • মূল বিষয়ের শাখা-প্রশাখা থেকে পরীক্ষা গ্রহণ করা উচিত নয়।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment