আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য পাঠদানে শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা ও শিক্ষকের আত্ম-উন্নয়ন এর অন্তর্ভুক্ত।

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

 

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

 

শ্রেণিকক্ষ মূলত শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। একজন শিক্ষকের জন্য সুষ্ঠু ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা বড় একটি চ্যালেঞ্জ । শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিভিন্ন ধরণের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানোর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না করে কার্যকর শিখন-শেখানো কার্যক্রম নিশ্চিত করা যায় না।

অন্যদিকে শ্রেণিকক্ষে একটি অধিবেশনের জন্য বরাদ্দকৃত সময় খুবই সীমিত। এ সীমিত সময়ের মধ্যেই নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা পূর্বক শিখন-শেখানোর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অর্থবহ ও ফলপ্রসূভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা করতে পারা শিক্ষকের জন্য আবশ্যক একটি বিষয়। এ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা মূলত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির উপায় ও প্রয়াস। এ অধিবেশনে আমরা শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ধারণা, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র, শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে শিখন-শেখানো ব্যবস্থাপনা এবং অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

কোন কাজ সফলভাবে সম্পাদনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিকল্পনা হলো কোন কাজ সম্পাদনের এমন রূপরেখা (Layout) যা আগাম প্রণয়ন করা হয়। পরিকল্পনা SMART (অর্থাৎ Specific, সুনির্দিষ্ট, Measurable পরিমাপযোগ্য, Attainable অর্জনযোগ্য, Realistic বাস্তব সম্মত, Time Bound সময়ানুগ) হওয়া প্রয়োজন। কোন কাজ নির্দিষ্ট সময়ে, সীমিত সম্পদে, সুষ্ঠু ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পাদনের জন্য অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুচিন্তিত ধারাবাহিক প্রক্রিয়াসমূহের নীল নকশাই পরিকল্পনা।

শ্রেণিকক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের নিকট শিখনকে আনন্দদায়ক, আকর্ষণীয়, স্বতঃস্ফূর্ত ও স্থায়ী করার জন্য শিক্ষক যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, তার সুচিন্তিত বহিঃপ্রকাশ ঘটে শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনায়।

শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কাজে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি কার্যকরভাবে প্রয়োগের জন্য পরিকল্পনা সকল কিছুর আগের একটি দিক। মানসম্মত একটি পরিকল্পনা কোন কাজের ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে ও তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেয়।

অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণ-শিখন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শ্রেণিকক্ষে কেন, কখন, কীভাবে, কী উদ্দেশ্যে, কাদের জন্য, কত সময়ে শিখন-শেখানো কাজে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করা হবে ইত্যাদি বিষয়ের পথ নির্দেশনা উল্লেখ থাকে।

এ পরিকল্পনায় বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষণ, জেন্ডার বৈষম্যহীন শিক্ষণ, সহযোগিতামূলক শিখন, সহজীকরণ শিক্ষণ, অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ, নিরাপদ ও আনন্দদায়ক শিখন পরিবেশে শিখনের নির্দেশনা ছাড়া ও শ্রেণিতে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের বিভিন্ন পর্বে শিক্ষকের কাজ, শিক্ষার্থীদের কাজ, শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি ও অর্জন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদির রূপরেখা উল্লেখ থাকে।

ব্যবস্থাপনা একটি ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। কোন কাজের সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রত্যাশিত মানে আঞ্জাম দেওয়া হলো ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনার অন্যতম মূল কথা হলো, কোন কাজ যথযথভাবে ও দ্রুততার সাথে আঞ্জাম দিতে পারা। আবার ব্যবস্থাপনা বলতে কোন কাজ অন্যদের দ্বারা সঠিকভাবে করিয়ে নেওয়াকেও বোঝায়। শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল বাহ্যিক পরিবেশ বা অবকাঠামোগত দিকের ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থীর মনো-সামাজিক দিকের ব্যবস্থাপনা শ্রেণি ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত।

কার্যকর শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মানবীয় এবং ভৌত উপাদানসমূহ সার্বিক ব্যবহার করে ইতিবাচক ও অনুকূল পরিবেশে যথার্থ জ্ঞান চর্চার আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরি হয়। এক কথায়, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া- যে প্রক্রিয়ায় শ্রেণিকক্ষে অনুকুল শিখন-শেখানো পরিবেশ সৃষ্টি ও কার্যকর শিখন নিশ্চিত করার জন্য ভৌত সুবিধাদিসহ মানবীয় ও কৌশলগত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার হয় ব্যবস্থাপনার। তাই পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা একটি ক্রমান্বিত পদক্ষেপ। যদি ও পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাঝে পার্থক্য রয়েছে তদুপরি পাশাপাশি ব্যবহার করে কখনো কখনো এ দুটি শব্দ দ্বারা প্রায় কাছাকাছি অর্থ বোঝানো হয়। আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা শিরোণামের এ অধিবেশনে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা অনেকটা কাছাকাছি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।

আরবি ভাষা ও সাহিত্য একটি ভাষা সংক্রান্ত বিষয়। ভাষার শ্রেণিকক্ষ অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই ভাষা শিক্ষককে এই ক্লাস সফল করার জন্য পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে।

শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র

শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে

ক. শ্রেণিকক্ষ সাজানো-গোছানো;

খ. শ্রেণিকক্ষে প্রশাসনিক নির্দেশনা;

গ. শিখন সহায়ক সামগ্রির পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা;

ঘ. শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ।

নিম্নে শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রসমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো:

শ্রেণিকক্ষ সাজানো-গোছানো

শ্রেণিকক্ষ সাজানো সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার আওতায় শ্রেণিতে আসন বিন্যাস, শিক্ষার্থীদের বসা ও কাজ করার উপযোগী আসবাবপত্র, শ্রেণিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করা, যথাস্থানে বোর্ড স্থাপন, উপকরণ সাজিয়ে রাখা, বিশেষ করে আরবি শেখার জন্য উপযোগী বিভিন্ন পোস্টার, প্লে-কার্ড ইত্যাদি ওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা-এর অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া শ্রেণিকক্ষের সঠিক আয়তন, নিরিবিলি ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ শ্রেণিকক্ষ সাজানোর সাথে সম্পর্কিত যদিও এগুলোর সবকিছু প্রত্যাশিত মাত্রায় তাৎক্ষণিকভাবে শ্রেণির শিক্ষক কর্তৃক নিশ্চিত করা সম্ভব নাও হতে পারে।

 

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

 

প্রশাসনিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

প্রশাসনিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার আওতায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের নির্দেশনা, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির রেকর্ড, শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পূর্বে, চলাকালীন এবং পাঠের শেষে শিক্ষার্থীদের করণীয় আচরণ সংক্রান্ত নীতিমালা, অনাকাঙ্খিত আচরণ নিয়ন্ত্রণ, শ্রেণিতে একক, জোড়ায় ও দলীয় কাজসহ বিভিন্ন ধরণের কাজের সময় শিক্ষার্থী কর্তৃক পালনীয় নির্দেশনা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

পাঠ সংশ্লিষ্ট শিখন সামগ্রী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

পাঠ সংশ্লিষ্ট শিখন সামগ্রী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পাঠ সংশ্লিষ্ট শিখন সামগ্রী সংগ্রহ করা, যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ সামগ্রী বন্টন করা, পাঠের শেষে শিখন সামগ্রী ফেরত আনা, শিখন সামগ্রী সংরক্ষণ করা, শিক্ষণ সংক্রান্ত বিদ্যমান সকল সম্পদের সর্বোচচ ব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যদিকে বুঝায়।

শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ধারণা

শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার গতানুগতিক ধারণায় সবার আগে, বিশেষত শ্রেণিকক্ষের শৃংখলা ও ভৌত ব্যবস্থাপনা বোঝায়। এর বাইরে শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় যে বিষয়টি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হলো শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা। শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা শ্রেণিকক্ষে শিখনের সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখনের পরিকল্পনা, আয়োজন, শিক্ষক শিক্ষার্থীর কর্মতৎপরতা ও পরিবেশ সৃষ্টি-এগুলো শিক্ষণ ব্যবস্থাপনার অপরিহার্য কাজ।

শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শাস্ত্রীয় ব্যবস্থাপনা বা ক্ল্যাসিক্যাল ম্যানেজমেন্ট (Classical Management)-এর চেয়ে মানবীয় সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা (Human Relation Management) বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য শ্রেণিকক্ষের শিক্ষণ শিখন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে প্রাথমিকভাবে দু’ভাগে ভাগ করে একটিকে ভৌত ব্যবস্থাপনা এবং অন্যটিকে মানবীয় ব্যবস্থাপনা নামে নামকরণ করা হয়। শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকের করণীয় অনেক।

এ কাজে শিক্ষা বিজ্ঞান তথা পেডাগুজি (Pedagogy) সংক্রান্ত বিষয়াবলী যে শিক্ষক যতবেশী দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করতে পারবেন, শ্রেণি শিক্ষণ শিখন কার্যক্রমকে তিনি ততবেশী ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করে তুলতে পারেন।

শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকের দক্ষতাই মূখ্য। যেমন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অবস্থান ও চলাফেরা, দৃষ্টি বিন্যাস ও শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, পাঠ সংশ্লিষ্ট উপযুক্ত পদ্ধতি-কৌশল নির্ধারণ ও প্রয়োগ, শিখনে আগ্রহ সৃষ্টি করা ও তার আগ্রহ ধরে রাখা, শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ও কর্মতৎপর রাখা, পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণ নির্বাচন ও তা ব্যবহার, সঠিক কৌশল অবলম্বন করে শ্রেণিতে প্রশ্নকরণ, পদ্ধতি গত বোর্ড ব্যবহার, শিক্ষণ-শিখনে আইসিটি মিডিয়ার ব্যবহার, অধিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কৌশল অনুসরণ-এগুলোর সবকিছুই শিখন-শেখানো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অংশ।

উল্লেখ্য, শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যস্থাপনার মানবীয় উপাদান হিসেবে শিক্ষকের উৎফুল্লভাব, প্রেরণাদান, ইতিবাচক মনোভাব, প্রেষণা জাগ্রতকরণ, সহযোগিতা, মুচকিহাসি, বাচনভঙ্গি, অভিব্যক্তি, বলবৃদ্ধিকারক কৌশল ব্যবহার, প্রশ্নকরণ কৌশল,তীক্ষ্মপর্যবেক্ষণ, বিষয়ের গভীরতা, আন্তরিকতাপূর্ণ কুশল বিনিময়, সহমর্মিতা, সময় জ্ঞান, যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ।

শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যস্থাপনার অন্যান্য ক্ষেত্ৰ

শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যস্থাপনার উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহ ছাড়াও আরো কতিপয় ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন—

আচরণিক ব্যবস্থাপনা, শৃংখলা ব্যবস্থাপনা, বিশেষভাবে সামর্থ্য (Specially Able) বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের আসনসহ তাদের জন্য অন্যান্য ব্যবস্থাপনা, জোড়া ও দলগঠন কৌশলসহ শ্রেণির নানা কাজ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।

অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ধারণা প্রদান প্রসঙ্গে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা প্রয়োজন। মূলত অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি একটি সামগ্রিক ধারণা। অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি একক কোন পদ্ধতি বা কৌশলের নাম নয়। শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণ-শিখন প্রসংঙ্গে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি হলো শিখন-শেখানোর ঐ সরকলা-কৌশল ব্যবহার যেগুলোর মাধ্যমে শিখনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করানো সম্ভব হয়।

অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি একটি শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক পদ্ধতি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে পাঠদান কার্যক্রম শ্রেণি পাঠনায় ব্যবহৃত হয় তাকে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি বলা হয়।

বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এ পদ্ধতিকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন, শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক (Learner Centered) শিক্ষণ, শিশুকেন্দ্রিক (Child Centered) শিক্ষণ, সক্রিয় শিখন (Active Learning), সহযোগিতামূলক শিখন (Cooperative Learning)। এ পদ্ধতি শিখনে সক্রিয় অংশগ্রহণের সাথে সাথে নতুন জ্ঞানসৃষ্টিতে শিক্ষার্থীর অংশীদারিত্ব স্বীকার করে ও এর প্রতি গুরুত্বারোপ করে। এজন্য এ পদ্ধতিকে অংশীদারিত্বমূলক পদ্ধতি ও বলা যেতে পারে। অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে শিখনে শিক্ষার্থীর ভূমিকা মূখ্য, শিক্ষকের ভূমিকা গৌণ ।

তুন জ্ঞান ও কৌশল অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান, বয়স, মানসিক দক্ষতা, আগ্রহ, রুচি, প্রবণতা ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে শ্রেণিকক্ষে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগের রূপরেখাকে অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা বলা যায়।

শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার প্রচলিত ধারণা থেকে অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ধারণা অনেক বিষয়ে যেমন অভিন্ন, তেমনি কিছু কিছু বিষয়ে আবার অনেকটাই আলাদা। কারণ, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার গতানুগতিক প্রক্রিয়ার সাথে অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় আরো নানা পদ্ধতি ও কৌশল অনুসরণ করতে হয়। এ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার সকল প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে শিখনে শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও শিখন সফলতা অর্জন। এ পরিকল্পনায় সবার আগে শিখন-শেখানো কাজে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকের স্পষ্ট ধারণা ও ব্যাপক দখল থাকতে হবে।

শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতির থেকে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির স্বাতন্ত্র্যমূলক বৈশিষ্ট্যের কারণেই শ্রেণি ব্যবস্থাপনার গতানুগতিক কলাকৌশল থেকে অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা ও অনেকটা আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা শ্রেণি ব্যবস্থাপনার অন্যান্য গতানুগতিক দিকগুলোর চেয়ে শিখন-শেখানো ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী স্বতন্ত্র। মূলত অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যস্থাপনা শিখন-শেখানোর একটি কৌশলগত প্রক্রিয়া।

সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ও শিখন সফলতা এ ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ, শিখনে শিক্ষার্থীর সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের যত উপায় আছে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট অনুসারে সেগুলোকে ফলপ্রসূভাবে প্রয়োগ করে শিখন সফলতা অর্জন এ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য।

তাই শিক্ষকের প্রস্তুতি, পাঠ পরিকল্পনা, শ্রেণিকক্ষের কাজ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থীদের পাঠে অংশগ্রহণ করানো, একীভূতকরণ, পাঠে মনোযোগ সৃষ্টিকরণ ও মনোযোগ ধরে রাখা, আন্তঃব্যক্তিক ও যোগাযোগ, সমস্যা সমাধান, বিশ্লেষণমূলক ও উচ্চস্তরের চিন্তন-দক্ষতার অনুশীলন, বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট উপকরণ চিহ্নিতকরণ, সংগ্রহকরণ ও যথাসময়ে তা ব্যবহার, প্রশ্নকরণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা ও শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক একটি সহযোগিতামূলক শিখন পরিবেশ সৃষ্টি করেন এবং শিখনকার্যে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, প্রশ্ন উত্থাপন এবং স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অবকাশ দেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকের চেয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মতৎপরতার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।

শিক্ষার্থীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আগ্রহ-চাহিদা এবং প্রবণতাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। এ পদ্ধতিতে কোন শিক্ষার্থীর নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকার কোন সুযোগ থাকে না। সকলেই কম-বেশি কর্ম-সম্পাদনে বাধ্য হয়ে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীর সকল প্রকার ইন্দ্রিয় দক্ষতার ব্যবহার ও বিকাশ নিশ্চিত হয়। এছাড়া শ্রেণিকক্ষের শিখন ও বাস্তব জগতের পরিস্থিতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা শিক্ষকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা শ্রেণিকক্ষের শিখন এবং বাস্তব জগতের প্রয়োজনের সঙ্গে যে তফাৎ, তার মাঝে সংযোগ সাধন করে। অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে ইতিবাচক, আনন্দময় ও শিখন বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এ বিষয়ের শিক্ষকের সর্বপ্রথম পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। সাথে সাথে অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার বিশেষ পদ্ধতি কৌশলগুলোরপ্ত করা খুব জরুরি একটি বিষয়।

 

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অংশগ্রহণমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা

 

অংশগ্রহণমূলক আরবি ভাষা ও সাহিত্য শ্রেণিকক্ষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা অনেকটাই শিখন-শেখানোর কৌশলগত প্রক্রিয়া। এজন্য একটি শ্রেণিকক্ষকে ইতিবাচক, আনন্দময়, শিখন বান্ধব ও একীভূত শিখন পরিবেশের রূপান্তরের লক্ষ্যে শ্রেণিকক্ষের সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশের প্রতি এ ব্যবস্থাপনা সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে।

এ ব্যবস্থাপনায় আরবি ভাষা ও সাহিত্য-এর বিষয়বস্তু শিখনে শ্রেণিতে সকল শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সকল শিক্ষার্থীর শিখন সফলতা প্রধান বিবেচ্য বিষয়। আমাদের দেশের শ্রেণিকক্ষ পরিস্থিতি অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির সকল কৌশল অনায়াসে সকল শ্রেণিকক্ষে সমনভাবে প্রয়োগ উপযোগী নয়। এজন্য শ্রেণিকক্ষের পরিস্থিতি অনুসারে এ পদ্ধতির কোন কোন কৌশলগুলো ব্যবহার বা প্রয়োগ উপযোগী এ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় তা শিক্ষককে বিবেচনায় রাখতে হবে।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment