আরবি ভাষা শিক্ষণে কোন কোন দিকের মূল্যায়ন দরকার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি ভাষা শিক্ষণে কোন কোন দিকের মূল্যায়ন দরকার – যা অগ্রগতি ও পারদর্শিতার মূল্যায়ন এর অন্তর্ভুক্ত।

আরবি ভাষা শিক্ষণে কোন কোন দিকের মূল্যায়ন দরকার

 

আরবি ভাষা শিক্ষণে কোন কোন দিকের মূল্যায়ন দরকার

 

আমাদের দৈনন্দিন জীবন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা কোনো কাজ করার বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের গুণগত ও পরিমাণগত মানযাচাই করে থাকি। এ জন্য আমরা কাজ চলাকালীন বিভিন্ন পর্যায়ে কাজটি নির্দিষ্ট সময় ও মানে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করে থাকি। আবার পরিকল্পনা মাফিক কাঙ্ক্ষিত মানে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে কিনা, তা জানার জন্য কর্ম- সম্পাদন শেষে আমরা মূল্যায়ন করে থাকি। সুতরাং কোনো কাজ সম্পাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের মান যাচাই করাই হলো মূল্যায়ন ।

শিক্ষা ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীর শিখন (জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি) যাচাইয়ের জন্য মূল্যায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। শিখন যাচাইয়ের জন্য শিক্ষক বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। যথাযথ ও সঠিক পদ্ধতিতে
মূল্যায়ন পরিচালনা করা না হলে শিক্ষার্থীর শিখন যাচাই সঠিক হয় না, ফলে শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন নাও ঘটতে পারে।

আরবি একটি বিদেশি ভাষা। সঠিক ও বৈচিত্র্যময় মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর ভাষাগত দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো যায় এবং ব্যবহারিক আরবিতে শিক্ষার্থীদের চাহিদা সামর্থ্য ও দক্ষতার সঠিক পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় ফিডব্যাক প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষাক্রমে উল্লেখিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব।

ব্যবহারিক আরবি বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ, প্রাঞ্জল ও বৈচিত্রময় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ভাষা, যার রয়েছে অনেকগুলো লাহজাত বা উপভাষা। প্রাচীনকাল থেকে এ ভাষায় রচিত হয়েছে অনেক উঁচুমানের সাহিত্য ভাণ্ডার। এ ভাণ্ডারকে অধিক সুশোভিত করেছে পবিত্র কুরআন ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস। কুরআন হাদিসকে কেন্দ্র করে এ ভাষায় রচিত হয়েছে জ্ঞান বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ের অসংখ্য গ্রন্থ’। তাছাড়া আরবি ভাষার রয়েছে প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব। বিশ্বের প্রায় ২২টি দেশের মানুষের মাতৃভাষা আরবি।

এটি জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জতিক সংস্থার স্বীকৃত অফিসিয়াল ভাষা। বিবিধ সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আরবি ভাষার ব্যবহার ক্রমবর্ধমান। আমরা ব্যবহারিক জীবনে পারস্পরিক কথোপকথন, সামাজিক যোগাযোগ, লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, প্রশাসনিক কার্যক্রম, পরামর্শ, উপদেশ, বাণী, খবরা-খবর, বক্তৃতা এবং ধর্মীয় আলোচনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আরবি ভাষার ব্যবহার করে থাকি। এমনিভাবে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত আরবিকেই আমরা ব্যবহারিক আরবি বলে থাকি ।

মূল্যায়ন

শিক্ষাক্রমের অন্যতম মৌলিক উপাদান হলো শিক্ষার্থী মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমে উল্লিখিত শিখনফল অর্জনের জন্য শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শিখন অর্জনে সহায়তা করেন। এ সহায়তা গ্রহণ করে শিক্ষার্থী শিখনফল অর্জন করছে কিনা, তা শিক্ষক যাচাই করে থাকেন। শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি যাচাইযের জন্য শিক্ষক একক কাজ, দলীয় কাজ, প্রশ্নোত্তর, শ্রেণি অভীক্ষা, ব্যবহারিক কাজ, বাড়ির কাজ, এ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করেন।

পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় শেষে, সাময়িক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষায় নম্বর প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষাথীর শিখন অগ্রগতি মূল্যায়ন করে গ্রেড প্রদান করে থাকেন। নির্দিষ্ট পাঠ শিক্ষার্থীরা কতখানি আয়ত্ত করেছে বা যা আয়ত্ত্ব করেছে তা তারা প্রয়োগ করতে পারে কিনা, তার পরীক্ষা করা হয় মূল্যায়ন স্তরে। এই স্তরে শিক্ষার্থীদের নবলব্ধ জ্ঞানের পরিমাপ করা হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় ও পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি যাচাই করাই হলো শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ।

মূল্যায়নের ধরণ

শিক্ষা ক্ষেত্রে দু’ধরনের মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ক. গাঠনিক/ধারাবাহিক মূল্যায়ন :

শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলাকালীন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি যাচাই করে প্রয়োজনীয় নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যে মূল্যায়ন করা হয়, তাই গঠনকালীন ধারাবাহিক মূল্যায়ন । এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সবলতা দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রয়েজনীয় ফিডব্যাক প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুত করা হয়। যেমন- শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ, শ্রেণি অভীক্ষা, বিতর্ক, প্রশ্নোত্তর ইত্যাদি।

খ. চূড়ান্ত মূল্যায়ন:

কোনো নির্দিষ্ট সময় বা পর্যায় সমাপ্তিতে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি যাচাই করা হলো চূড়ান্ত মূল্যায়ন। এ মূল্যায়নের দ্বারা শিক্ষার্থীর পাশ ফেল নির্ধারণ করা হয় এবং তাদের সাফল্যের তুলনামূলক অবস্থান নির্ণয় করে গ্রেড প্রদান করা হয়। যেমন- সাময়িক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষা।

ব্যবহারিক আরবির মূল্যায়ন

অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ব্যবহারিক আরবির শিখন যাচাইয়ের জন্য ও গাঠনিক এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি প্ৰয়োগ করা যেতে পারে। তবে অন্যান্য ভাষার ন্যায় আরবি ভাষায় ও চারটি দক্ষতার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গাঠনিক বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষত শুনার দক্ষতা ও বলার দক্ষতার মূল্যায়ন সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষায় করা যায় না বিধায় এ দুটি দক্ষতার মূল্যায়ন শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হয়। শিক্ষার্থীকে এ দক্ষতাগুলো ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে— যেমন কীভাবে শব্দের উচ্চারণ করছে, কীভাবে কথা বলছে, কীভাবে একটি ছবির ব্যাখ্যা করছে, কীভাবে ইন্টারভিউ দিচ্ছে এবং কোনো ঘোষণা আরবিতে শুনে সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে কিনা, ইত্যাদি বিষয়ে গঠনকালীন মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

মূল্যায়নের গুরুত্ব

  • মূল্যায়নের ফলে শিক্ষাক্রমে উল্লিখিত শিক্ষার উদ্দেশ্য অর্জনের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়।
  • পঠিত বিষয়ের অগ্রগতি যাচাই করা সম্ভব হয়।
  •  ফলাবর্তন।
  •  শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের ক্রমোন্নয়ন করা সহজ হয়।
  •  শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রায়োগিক কার্যকারিতা যাচাই বাচাই করা যায়।
  •  শিক্ষার্থীর সার্বিক ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়। গ্রেড প্রদান ও উচ্চতর শ্রেণিতে প্রমোশন দান করা যায়।
  • শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা যাচাই করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশে আলিয়া ও কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে আরবি পাঠদান করার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সঠিকভাবে কোরআন ও হাদিস বুঝা এবং আহকামুস শরিয়াত অনুযায়ী আমল করা। বর্তমান যুগে ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে আরবি ভাষা আমাদের নিকট অনেক গুরুত্বপুর্ণ।

আমরা ব্যবহারিক জীবনে পারস্পরিক কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ, লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, খবরা-খবর এবং ধর্মীয় আলোচনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আরবি ব্যবহার করি। আরবি ভাষা শিক্ষণে আলিয়া মাদরাসায় – ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী বর্তমানে দাখিল স্তরে আরবি ১ম পত্রের সিলেবাস – কারিকুলাম এবং পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে; المدروس ও غيرالمدروس-এর আলোকে আরবি ১ম পত্রের পরীক্ষা সংঘটিত হয়।

অর্থাৎ বই থেকে একটি unill বা অনুচ্ছেদ থাকে তার নিচে কতগুলো প্রশ্ন থাকে, Jail থেকে তার উত্তর দিতে হয়। আরবি আমাদের মাতৃভাষা না হওয়ার কারণে তা শেখার ক্ষেত্রে অনেক দিক লক্ষ্য করতে হয়। বিশেষভাবে আরবি ভাষার শিক্ষার্থীদের কোন কোন দিকের মূল্যায়ন দরকার, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো ।

 

আরবি ভাষা শিক্ষণে কোন কোন দিকের মূল্যায়ন দরকার

 

ব্যবহারিক আরবি মূল্যায়নের প্রকারভেদ

ব্যবহারিক আরবির মূল্যায়ন;

i. উভয় প্রকার মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রয়োগ;
ii. ভাষার চার দক্ষতার মূল্যায়ন;
iii. বিশেষত ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রয়োগ।

 

 শ্রবণ দক্ষতার মূল্যায়ন

১. সাদৃশ্যমূলক ধ্বনির মূল্যায়ন

যেমন – زميل ،جميل ،جمل -এ ধরণের শব্দগুলো মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে। উচ্চারণ খেয়াল করে এসবের উচ্চারণে সাদৃশ্য বৈশাদৃশ্য, পার্থক্য এবং এসবের অর্থ নির্ণয় করবে।

২. শারীরিক অঙ্গ সঞ্চালনের পরীক্ষা

শিক্ষক শিক্ষার্থীকে আরবিতে বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালনের নির্দেশ দিবেন এবং নির্দেশনা মতো সঞ্চালন করতে পারছে কিনা, তা দেখবেন।

৩. ছবির বিশ্লেষণ

শিক্ষক ছবি দেখিয়ে, সংশ্লিষ্ট ইবারত শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের মিলাতে বলবেন ।

৪. বাক্যের তুলনাকরণ

একটি বাক্য শুনিয়ে অতপর আরেকটি বাক্যে একটি শব্দ বৃদ্ধি/পরিবর্তন করে শুনাবেন তারপর শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত/পরিবর্তিত বাক্যটি বলবেন।

বলার দক্ষতার মূল্যায়ন

১. উচ্চারণের পরীক্ষা

বিভিন্ন শব্দ/বাক্য/সংলাপ বলানোর মাধ্যমে আরবি শব্দের সঠিক উচ্চারণ যাচাই করবেন। Kalabaga

২. বক্তৃতা

নির্দিষ্ট বিষয়ে আরবিতে বক্তৃতা দিতে বলবেন।

 

আরবি ভাষা শিক্ষণে কোন কোন দিকের মূল্যায়ন দরকার

 

৩. বিতর্ক

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে নির্দিষ্ট বিষয়ে আরবিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করবেন ও মূল্যায়ন করবেন।

৪. বাক্যের পরিবর্তন

একটি বর্ণনামূলক বাক্য বলে তা আদেশ/নিষধ/প্রশ্ন ইত্যাদিতে পরিবর্তন করতে বলবেন। অথবা এর বিপরীত করতে বলবেন।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment