আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-রূপতত্ত্ব ভূমিকা
রূপতত্ত্ব ভূমিকা
সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানে ভাষার রূপ সংগঠনের অন্যতম একক হচ্ছে রূপমূল (morpheme)। রূপমূল ভাষার অর্থবোধক ক্ষুদ্রতম ধ্বনি। ভাষার রূপতত্ত্ব আলোচনায় তাই রূপমূল গুরুত্বপূর্ণ।
রূপতত্ত্বে ভাষায় ব্যবহৃত রূপমূলের গঠন এর শ্রেণিবিভাগ চিহ্নিত করা, এদের অবস্থান পরিবেশ ও গঠন- প্রকৃতির পরিবর্তন নির্দেশ করে এর বিশ্লেষণগত দিকের পর্যালোচনা করা হয়।
রূপমূল গঠন (Formation of Morphemes )
অক্ষর ও রূপমূল (Syllable and morpheme)
প্রমিত বাংলার মতো ডেমরা থানার শ্রমিকশ্রেণির ব্যবহৃত ভাষাও গঠনগত বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে রূপমূলের সঙ্গে অক্ষরের পার্থক্য লক্ষণীয়। এক বা একাধিক ধ্বনির সম্বন্বয়ে মূলত অর্থহীন অক্ষর গঠিত হয়, যেমন-এই, কে, মা ইত্যাদি। আর এক বা একাধিক ধ্বনি দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্রতম অর্থবোধক ভাষাতাত্ত্বিক উপাদান হল রূপমূল।
যেমন-গাছ, বই ইত্যাদি এক একটি রূপমূল। রূপমূল ও অক্ষরের মধ্যে অর্থগত দিক থেকে পার্থক্য লক্ষণীয়। ধ্বনি দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্রতম অর্থবোধক ভাষাতাত্ত্বিক উপাদান হল রূপমূল। কিন্তু অক্ষরের সবসময় অর্থ থাকে না। রূপমূল গঠনের ক্ষেত্রে অর্থগত দিকের প্রাধান্য বেশি এবং অক্ষর গঠনের ক্ষেত্রে উচ্চারণগত দিকই প্রধান।
যেমন-‘অহনতরি’ দুটো আলাদা রূপমূল ‘অহন’ রূপমূলের অর্থ এখন, তরি’ অর্থ পর্যন্ত। ‘অহন’ রূপমূলটি উচ্চারণগত দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে অক্ষর সংখ্যা পাওয়া যায় দুটো (অ + হন) = অহন। ‘অ’ ও ‘হন’ অক্ষরের কোন অর্থ নেই। শুধু উচ্চারণগত দিক থেকে দুটো অক্ষর হয়েছে।
ডেমরা অঞ্চলে ভাষা ব্যবহারকারী কথোপকথনের সময় কিভাবে রূপমূল ব্যবহার করে, রূপমূল ও ধাতুর সঙ্গে কি কি শব্দ বিভক্তি, ক্রিয়া বিভক্তি ও প্রত্যয় যোগ হয় এবং এর ফলে শব্দরূপ ও ক্রিয়ারূপ কি হয় তাই এ অধ্যায়ে আলোচিত হবে। ডেমরা অঞ্চলে এক বা একাধিক অক্ষর সমন্বয়ে রূপমূল গঠিত হয়। যেমন-
রূপমূল শ্রেণি বিন্যাস (Classification of Morphemes )
গঠনানুসারে রূপমূলের শ্রেণিবিভাগ নিম্নে দেয়া হল :
1. মুক্তরূপমূল
2. বিভাজিত রূপমূল
3.অতিরিক্ত রূপমূল
4. সহরূপমূল
5.শূন্যরূপমূল
6.মিশ্ররূপমূল
7.জটিলরূপমূল
8.বদ্ধরূপমূল
ছকে রূপমূলের শ্রেণি বিভাগ
মুক্তরূপমূল (Free Morpheme)
যুক্তরূপমূল অন্য রূপমূলের সাহায্য ছাড়া এককভাবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং এদের নিজস্ব অর্থ আছে। মুক্তরূপমূল ক্ষুদ্রতম অংশে বিভাজ্য নয়। যেমন হেয় (সে), উলান (নাড়া দেয়া), বালা (ভাল), কয় (বলে), ক (বল), হুন (শোন)।
মুক্ত রূপমূলের সঙ্গে একাধিক মুক্ত বা বদ্ধরূপমূল সংযুক্ত হয়ে বৃহত্তর রূপমূল গঠন করে। যেমন : দুটো মুক্ত রূপমূল সংযুক্তির ফলে গঠিত বৃহত্তর রূপমূল। মুক্তরূপমূল দলা (সাদা) + কোর্তা (জামা) = দলাকোর্তা (সাদা জামা)।
মুক্তরূপমূল +যুক্তরূপমূল =বৃহত্তর রূপমূল -বিয়ান+রাইতবিয়ানরাইত ভোররাত
যুক্তরূপমূলের সঙ্গে বদ্ধরূপমূল সংযুক্তির ফলে গঠিত বৃহত্তর রূপমূল।
যুক্তরূপমূল + বদ্ধরূপ মূল = বৃহত্তর রূপমূল – –
লাহরি (লাকরি) + র
→ লাহরির
লাকরির
বই+ গুলান → বইগুলান
বইগুলো
পাত্তর (পাথর) + এর পাত্তরের পাথরের
সূত্রাকারে রূপমুলের গঠন-প্রক্রিয়া
যুক্তরূপমূল + যুক্তরূপমূল
অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
মুক্তরূপমূল + বদ্ধরূপমূল
নতুন অর্থ প্রাপ্ত হয়।
ডেমরা থানায় বসবাসরত শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবনে কথোপকথনে ব্যবহৃত ভাষার রূপমূল গঠন বিচার করে দেখান যায়-
১. মুক্তরূপমূল এককভাবে ব্যবহৃত হয়।
২. মুক্তরূপমূলের সঙ্গে বন্ধরূপমূল সংযুক্ত হয়ে ভাষার রূপমূল গঠন করে।
৩. মুক্তরূপমূলের সঙ্গে মুক্তরূপমূল যুক্ত হয়ে নতুন রূপমূল গঠন করে।
ডেমরা অঞ্চলে ১,২,৩ শ্রেণির মধ্যে ২,৩ শ্রেণির রূপমূল অর্থাৎ বৃহত্তর রূপমূল বেশি ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
যুক্তরূপমূল যুক্তরূপমূল
বৃহত্তর রূপমূল
নতুন অর্থ প্রাপ্তি
খাতির + জমা
খাতির জমা
ধীরে ধীরে করা
‘খাতির’ মুক্তরূপমূলের অর্থ সখ্যতা আর ‘জমা’ যুক্তরূপমূলের অর্থ জমিয়ে রাখা বা জমানো। এই ‘খাতির’ ও ‘জমা’ মুক্তরূপমূল দুটো যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে বৃহত্তর রূপমূল ‘খাতির জমা’ যার অর্থ দাঁড়ায় ধীরে ধীরে করা। এ ক্ষেত্রে মুক্তরূপমূল দুটোর অর্থের পরিবর্তন ঘটে নতুন অর্থ প্রাপ্ত হয়।
এই শ্রেণির রূপমূল ডেমরা থানায় পরিলক্ষিত হয়।
মুক্ত রূপমূলের সঙ্গে বন্ধরূপমূল যুক্ত হওয়ার পর বৃহত্তর রূপমূল গঠিত হয় এবং সেই সঙ্গে মুক্ত রূপমূলের অর্থের
পরিবর্তন ঘটে।
বৃহত্তর রূপমূল
মাইয়ার (মেয়ের)
যুক্তরূপমূল
মাইয়া +
বন্ধরূপমূল
মাইয়ার
লেমটা
কুপি + টা
লেম + টা
ঢাকা + ত
কুল্পিটা
লেমটা
বাতিটা
ঢাকাত (ঢাকাতে)
পোলায় ঢাকাত
মেয়ের প্রসঙ্গে বলা
বাতিটি
স্থান (বসবাস অর্থে)
রফিক্যার
আগোর
চাহার
লেমত
লগের
নাছায়
ঠেংগানো (মারা) দুমাইয়া
রফিক + অ্যার
অ্যাগুলো + র ঢাহা + র লেম (বাতি) + ত
লগ (সাথে) + এর
নাছ (নৃত্য) + আয়
দুমা + ইয়া
রফিক্যার বাইত যা
আঙ্গগোর ঘর
ঢাহার মাইয়া
– লেয়ত আগুন দে
র ওর লগেরটা ইস্কুলত
ায় উইয়ে নাছায় হুগলতরে
তরে ঠেংগামু দুমাইয়া মাছ উঠছে
ব্যক্তির বাড়ি
আমাদের ঘরের ভেতর অর্থে
স্থান অর্থে মেয়েটি ঢাকার
বাতিদানিতে আগুন দেয়া অর্থে
অন্য ব্যক্তি প্রসঙ্গে
র নাচায় অর্থে নৃত্য নয়,
অন্যদের হাতের
ইশারায় ঘুরানো
অর্থে লাথি মারা
অর্থে দুমা অর্থ ধোয়া, এখানে
দুমাইয়া হল অনেকগুলো।
যুক্তরূপমূল + যুক্তরূপমূল
আঞ্চলিক (বৃহত্তর রূপমূল)
কাপর + চোপর
দারুম +দুরুম
দিল+উড্যা
দরের (কলিজা) + পানি
থোতার (মুখ) + জোর
ত্যাগ + ত্যালা
কোলা + পাইলা
খাউয়া + বাউয়া
প্রমিত অর্থ
সবকিছু নিয়ে চলে যাওয়া
শব্দ করে দরজা বন্ধ অর্থে
মায়ামহব্বত নষ্ট হওয়া অর্থে কলিজার পানি
মুখ (কথা বলার ক্ষমতা)
হৃষ্টপুষ্ট
(মাটির পাতিল) পাতিল
অমসৃণ
উদাহরণ
কাপরচোপর লইয়া কই মেলা দিলি
দারুমদুরুম কেওর লাগাইছনা ।
হরতন দিলউড্যা গেছেগা।
হের দরের পানি হুগায় গেছে বয়ে।
( ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে যাওয়া)
তুই তর থোতার জোরেই পার পাইবি
শইলভাতো ত্যাল ড্যাপা করছন গরুর লাহান
ঠোলাপাইলা মাইজা রাখ।
লাউড়া খাউয়া বাউয়া (অমসৃণ )
বিভাজিত রূপমূল ও অতিরিক্ত রূপমূল
ক. বিভাজিত রূপমূল
যে রূপমূল স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি সমন্বয়ে গঠিত এবং গঠনক্ষেত্রে স্বরাঘাত, মীড় বা সংযোগস্থলের কোন ভূমিকা থাকে না, সেগুলো বিভাজিত রূপমূলরূপে পরিচিত।
বিভাজিত রূপমূলের ক্ষেত্রে শূন্যরূপমূল ও সহরূপমূল অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকে। এই শ্রেণির রূপমূলকে মৌলিক রূপমূল বা রূপমূলের ভিত্তি স্বরূপ গ্রহণ করা যায়। (মোরশেদ ১৯৯৭ : ৩০১ ) সকল অর্থবোধক শব্দই এ শ্রেণির অন্তর্গত। ডেমরা অঞ্চলের ভাষায় বিভাজিত রূপমূলের উদাহরণ :-
3. হাপ (সাপ)
2.. অগা (বোকা)
(হ+ আ + প )
(অ+ গ + আ)
(ব্য + স্ব + ব্য)
(স্ব + বা + স্ব)
৩. দেনু (ধনুক )
8.বান (বর্ষা)
(দ+এ+ন+উ)
( ব + আ + ন)
(বা + + বা + স্ব )
(ব্য + স্ব + ব্য)
৫. উডান (উঠান)
(উ + ড + আ + ন)
(+4+7+4)
খ. অতিরিক্ত রূপমূল
এই শ্রেণির রূপমূল গঠনে বিভাজিত রূপমূলের ওপর স্বরাঘাত, মীড় অথবা সংযোগস্থলের অন্তর্ভুক্তির সাহায্যে সমশ্রেণির বিভাজিত রূপমূলের অর্থগত পার্থক্য নির্দেশ করে। বাংলায় অতিরিক্ত রূপমূল গঠনে একমাত্র সংযোগস্থলের অন্তর্ভুক্তিই লক্ষণীয় (মোরশেদ প্রাগুক্ত : ১৯৯৭ : ৩০১)। বিভাজিত রূপমূলের মধ্যে সংযোগস্থল অন্তর্ভুক্তির সাহায্যে রূপমূলের পার্থক্য নির্দেশ করা হল ।
অর্থ
নালায়েক
(ছোট ছেলেমেয়ে)
-বিভাজিত রূপমূল
না + নায়েক
বড় না হওয়া
-অতিরিক্ত রূপমূল
নিদান
নিন দান
(ঘৃণা)
নিন্দা করা
-বিভাজিত রূপমূল
-অতিরিক্ত রূপমূল
সমশ্রেণির বিভাজিত রূপমূলের অর্থগত পার্থক্য নির্দেশে স্বরাঘাত ও সংযোগস্থল প্রভাব রাখে।

সহরূপমূল (Allomorph)
সহরূপমূল হল রূপমূলের পরিবর্তনীয় সদস্য, যা রূপমূলের বিশেষ পরিবেশে ব্যবহৃত হয়।
সহরূপমূলের তিনটি দিক বিদ্যমান
1. এর আকার বৈচিত্র্য বিদ্যামান
2. আকার বৈচিত্র্যের অর্থ এক হতে হবে এবং
আকার বৈচিত্র্য ব্যাখ্যাযোগ্য হতে হবে। রা, গুলান, গুলি ইত্যাদি সহরূপমূল।
পোলারা পোলা + রা, ছেমরিরাছেমরি + রা
ডেমরা থানার শ্রমিকশ্রেণির ভাষায় নিম্নলিখিত সহরূপমূল ব্যবহৃত হতে দেখা যায়-
3. রা-মাইয়ারা/ ছেমরিরা / পোলাপানেরা
2. গুলান-মাছ গুলান / আমগুলান
4. ফাইত-পোলা+ফাইত= পোলাফাইত। ‘ফাইভ’ সহরূপমূল বহুবচন নির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত
হয়।
রা, গুলান, ফাইত ইত্যাদি রূপমূল বহুবচনে একই অর্থ প্রকাশ করে। প্রমিত ভাষার ন্যায় ডেমরার ভাষায় বহুবচন নির্দেশক সহরূপমূলগুলোর ধ্বনিতাত্ত্বিক কোন পরিবেশ নেই, কিন্তু রূপমূলক পরিবেশ বিদ্যমান।
‘রা’ (রা > এরা)-মনুষ্যবাচক রূপমূলের সঙ্গে ‘রা’ সহরূপমূল ব্যবহৃত হয়।
‘রা’
ছেমরি +রা, মাইয়া +রা, মাইয়ারা, ছেমরিরা ‘গুলান’- ‘গুলান’ সহরূপমূল প্রাণীবাচক অপ্রাণীবাচক রূপমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বহুবচন নির্দেশ করে।
মাছ + গুলান = মাছগুলান
আম + গুলান = আমগুলান
‘ফাইত’- পোলা + ফাইত = পোলাফাইত, এখানে ‘ফাইভ’ বহুবচন নির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যতিক্রম হিসাবে ‘গুলান’ সহরূপমূল কদাচিত মনুষ্যবাচক রূপমূলের সঙ্গে অনাদরে ব্যবহৃত হয়। যেমন-পোলাপাইন + গুলান = পোলাপাইনগুলান। অর্থ ছোট ছেলে মেয়েরা, মানুগুলান (মানুষগুলো)।
মিশ্ররূপমূল
দুটো মুক্তরূপমূলের সমন্বয়ে যে রূপমূল গঠিত হয় এবং গঠিত রূপমূলটি মুক্তরূপমূল দুটির অর্থকে অতিক্রম করে নতুন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে মিশ্ররূপমূল বলে। ডেমরার প্রচলিত ভাষায় এ রীতি প্রচলিত। যেমন-
লাল আলু লাল + আলু (মিষ্টি আলু)। ‘লাল’ অর্থ লাল রং ‘আলু’ অর্থ সবজি। লালআলু অর্থ মিষ্টি আলু।
‘চানরাত’- চান + রাত (ঈদের পূর্বের রাত)
‘চান’ মুক্ত রূপমূলের অর্থ চাঁদ। ‘রাত’ যুক্তরূপমূলের অর্থ ‘রাত্রি’- ‘চানরাত’ মিশ্ররূপমূলের অর্থ—ঈদের
আগের রাত।
জটিল রূপমূল
তিন বা ততোধিক মুক্তরূপমূলের সমন্বয়ে যে রূপমূল গঠিত হয় এবং গঠিত রূপমূলটি স্বাধীন অর্থ প্রকাশ করে তাই জটিল রূপমূল। যেমন : কানজিজাউবাত – ( কানজি জাউ ভাত একধরনের নরম ভাত যা গন্ধযুক্ত)
কানজি + জাউ + ভাত-এই জটিল রূপমূলটি তিনটি যুক্তরূপমূলের সমন্বয়ে গঠিত।
‘কানজি’ অর্থ পচা, ‘জাউ’ অর্থ নরম, ‘ভাত’ অর্থ খাবার ভাত। এই জটিল রূপমূলটির অর্থ সম্পূর্ণ স্বাধীন, যা বিশেষ একধরনের খাদ্যের নাম প্রকাশ করে কানজিজাউভাত।
শূন্যরূপমূল
রূপমূল কখনো কখনো কোন প্রকার বন্ধরূপমূল সংযুক্তি ছাড়াই বহুবচন রূপটি প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে একধরনের উহা নির্দেশক ভাবপ্রকাশক হিসেবে কাজ করে। এ ধরনের নির্দেশককে শূন্য (০) রূপমূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ রূপমূল প্রত্যয়মূলক, বিভক্তিমূলক উভয় প্রকারের হতে পারে। শূন্যরূপমূল অনেকসময় সহরূপমূল হিসেবে
ব্যবহৃত হয়। যেমন-
মাছ-মাছ + বহুবচন
মাছ + ০ = মাছ
আলু আলু + বহুবচন
আলু + = আলু
পটল পটল + বহুবচন পটল + ০ =পটল
মাছ, আলু, পটল এক বা একাধিক হতে পারে। বাজার থেকে ‘পটল কিন্যা আনছি বাক্যে পটল একটি নয় অনেকগুলো কিনে আনা হয়েছে বোঝায়। অর্থাৎ এখানে শূন্য রূপমূল যুক্ত হয়ে বহুবচনই বোঝায়। ‘পটল’ রূপমূলের সঙ্গে বহুত্ব ব্যঞ্জক সহরূপমূল একটি শূন্য ভাগ কার্যকর। তেমনিভাবে ‘কলা আনছি’, কাচকি মাছ আনছি’ বাক্যে ‘কলা’, ‘কাচকি’র সঙ্গে শূন্য রূপমূল যুক্ত হয়েছে।
বদ্ধরূপমূল
যুক্তরূপমূল স্বতন্ত্রভাবে অর্থ প্রকাশে সক্ষম আর বন্ধরূপমূল স্বতন্ত্রভাবে অর্থ প্রকাশে সক্ষম নয়, যুক্তরূপমূলের সঙ্গে যুক্ত হলে তবেই অর্থ প্রকাশিত হয়, অর্থাৎ বদ্ধরূপমূল অর্থ বহনের ক্ষমতা থাকলেও অর্থ প্রকাশে স্বনির্ভরশীল নয়। যেমন-রা, এরা এগুলো নিজে কোন অর্থ প্রকাশ করে না এবং এককভাবে ব্যবহৃতও হতে পারে না।
তবে ‘পোলা’ যুক্তরূপমূলের সঙ্গে ‘রা’ যুক্ত হয়ে পোলারা হয় এবং বহুবচন নির্দেশ করে। তাই ‘রা’, ‘এরা’-বন্ধরূপমূল। বইগুলান-বই (মুক্তরূপমূল) + গুলান (বদ্ধরূপমূল) (বইগুলো)
বদ্ধরূপমূল মুক্তরূপমূলের পূর্বে এবং শেষে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। প্রত্যয় ও বিভক্তি-ই বদ্ধরূপমূল হিসেবে বিবেচিত। ডেমরা অঞ্চলে ব্যবহৃত মুক্তরূপমূলের সাথে বদ্ধরূপমূল যুক্ত হয়ে বচন, লিঙ্গ, ক্রিয়ার কাল, পুরুষ ইত্যাদি দিক নির্দেশ করে।
প্রত্যয় সংযুক্তি
রূপমূল গঠন ও মুক্ত রূপমূলের গঠন প্রকৃতি পরিবর্তনের মাধ্যমে রূপমূলের প্রসারের ক্ষেত্রে প্রত্যয়- বিভক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। বদ্ধরূপমূল ‘প্রত্যয়’ মুক্তরূপমূলের পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে এর অর্থ ও শ্রেণির পরিবর্তন ঘটায়। বর্তমান আলোচনায় এই শ্রেণির বদ্ধরূপমূলকে আদি প্রত্যয় বা উপসর্গরূপে দেখানো হল। তবে আদি প্রত্যয় যুক্ত রূপমূল ডেমরা অঞ্চলের ভাষায় খুব বেশি প্রচলিত নয়। প্রত্যয়, বিভক্তি
আদিপ্রত্যয় (উপসর্গরূপে বন্ধরূপমূল)
রূপমূল
‘বে’
গর-
না-
নি –
হা-
বিপরীতার্থে
নিন্দার্থে
বিপরীতার্থে
নিঃশেষ অর্থে
দ্রুত নেমে যাওয়া অর্ধে
না বাচকতা অর্থে
সক্ষম না হওয়া অর্থে
না বাচকতা অর্থে
অভাব অর্থে ব্যবহৃত
নিন্দার্থে ব্যবহৃত
নিকৃষ্টতা অর্থে ব্যবহৃত
নিন্দার্থে নিন্দার্থে বা খারাপ অর্থে
ব্যবহৃত
উদাহরণ
গরো টেকা নাই বেহাল অবস্থা।
বেহাল
বেহাইয়া (লজ্জাহীন)
বেলাজা (লজ্জাহীন)
বেশরম (লজ্জাহীন)
বেমালুম
বেমালুম গায়েব কইরা দিছে।
গরগর কইরা (পানি দ্রুত খাওয়া অর্থে)
না করগা (কোন কিছু করতে অস্বীকার করা )
অর্থে গরগরাইয়া (গড়িয়ে যাওয়া)
না লাক (নালায়েক / নালাইক্যা পোলা দিয়া একাম হইত না)
না লাইক্যা
নিলাজ (লজ্জাহীন)
‘নি’ অর্থ নেই লাজ অর্থ লজ্জা।
নিকরমা (নিষ্কর্মা অর্থে)
নি অর্থ নেই করমা অর্থ কাজে সক্ষম।
হাবাইত্যা (এমুন হাবাইত্যা দেহি নাই।) হা-অভাৰ বাইত্যা অর্থ খাবার দেখে
অস্তির হওয়া ব্যক্তি
হাপিত্যাস (আফসোস করা) হাপিত্যাস করা বালা না ।
হা অর্থ আহাজারি পিত্যাস অর্থ আফসোস করা।
অজম্যা (গালি দেয়া অর্থে)
অকাম (ভাল কাজ না করা অর্থে)
অর্থে কুকথা (কুকথা খারাপ কথা)
মধ্যপ্রত্যয় : বদ্ধরূপমূল মুক্তরূপমূলের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে নতুন রূপমূল গঠন করে।
রূপমূল
মধ্যপ্রত্যয়
আজকার কতা (আজকের কথা)
আর
বাজানের লঙ (বাবার লুঙি
এর
অন্ত্যপ্রত্যয়
প্রমিত ভাষার ন্যায় ডেমরার ভাষায় অন্ত্য প্রত্যয় ব্যাকরণগত শ্রেণি বিভাগের চিহ্নরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন-কারক, বচন, পুরুষ, ক্রিয়ার কাল ইত্যাদি।
ক. অন্ত্যপ্রত্যয় (অনুসর্গরূপে বন্ধরূপমূল
বন্ধরূপ মূল
প্রযুক্ত অর্থ
উদাহরণ
-দার
যে রাখে
দোহানদার (মুদি দোকানের ব্যবসায়ী ব্যক্তি)
দোহান + দার
জমিদার (জমি + দার) (দোকানের মালিক)
পহরদার (পহর+ দার) (রাতে পাহাড়া দেয়)
চকিদার (চকি+ দার) (রাতে পাহাড়া দেয়)
-দারি কাজ / ব্যবসা করা অর্থে
দোহানদারি (দোহান+দারি) ব্যবসায়ী ব্যক্তি কাজকে বোঝাতে
জমিদারি অমিতব্যয়ী আচরণ বেঝাতে
চকিদারি কাজ অর্থে
-টাল
লাইটাল লাঠি খেলায় দক্ষ ব্যক্তি অর্থে ব্যবহৃত
। মারামারি প্রয়োজনে এদের ব্যবহার করা হয়।
-আছত
কান্না করছে কানতাছত অন্ত্যপ্রত্যয় হিসেবে ‘আছত’ মুক্ত রূপমূল
‘কান্না’-র সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে।
উল্লেখিত উদাহরণে একটি রূপমূলের সঙ্গে আরেকটি রূপমূল যুদ্ধ হয়ে বৃহত্তর রূপমূল গঠন করেছে। এখানে
‘দোহান’ অর্থ দোকান। দোহান+দার-দোহানদার অর্ধ-ব্যক্তি। দোহান+দারির দোহানদারির অর্থ-ব্যক্তিটির জীবিকা
নির্বাহের কাজ।
খ. কারক নির্দেশকরূপে বন্ধরূপমূল
হে গরো (অধিকরণ কারক) সে ঘরে ব্যক্তি ঘরের ভেতর অবস্থান করছে অর্থে ব্যবহৃত।
আডো
সে হাটে
গর’ ও ‘আড’ মুক্তরূপমূলের সঙ্গে / ৩/ বন্ধরূপমূল যুক্ত হয়ে ‘পরো’ ও ‘আড়ো হয়েছে। এখানে ‘ঘর’ ও ‘হাট’ অর্থ
পরিবর্তিত হয়ে অর্থ হয়েছে ব্যক্তি ‘হাটে’ (বাজার) আছে বা গিয়েছে অর্থে।
আম পার
(অপদান কারক)
গাছ’ মুক্তরূপমূলের সঙ্গে ‘তে’ বদ্ধরূপমূল ব্যবহৃত হওয়ায় গাছ থেকে আম পারা অর্থ প্রাপ্ত
হয়েছে।
পাছোত্তে আম পরছে
‘তে’ রূপমূল ব্যবহৃত হওয়ায় গাছ থেকে আম নিচে পড়েছে অর্থ প্রকাশ করছে।
“বাজানরে ডাক।’ ‘রে’ বন্ধরূপমূলটি এখানে সম্বন্ধ পদ নির্দেশ করে। বাবাকে ‘
-/3/
বউর মার বাইত যাইবো। /৪/ বহুরূপমূলটি এখানে সম্বন্ধ পদ নির্দেশ করে। ‘বউয়ের মায়ের’
হের মাইয়ার গরো ‘এর’ বহুরূপমূলটি এখানে সম্বন্ধ পদ নির্দেশ আছে। হের অর্থাৎ তার মায়ের।
গ. বহুবচন নির্দেশকরূপে বন্ধরূপমূল
অন্ত্যপ্রত্যয়
অর্থ
-গুলান
বহুবচন
উদাহরণ
মাছগুলান, ছেরিগুলান
মাইয়ারা, পোলারা, পোলাপানরা
-রা
বহুবচন
:- এরা
বহুবচন
মাস্টরেরা
-ফাইত
বহুবচন
ছেরিফাইত
ডেমরা অঞ্চলের ব্যবহৃত ভাষায় বহুবচনের ক্ষেত্রে কখনও কখনও বহুবচনের চিহ্ন রূপমূলে লুপ্ত অবস্থায় থেকে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
গাছতে আম পরতাছে অর্থ-গাছ থেকে অনেক আম পড়ছে।
পুকুরে মাছ উটতাছে অর্থ-পুকুরে অনেক মাছ উঠছে।
এ দুটি উদাহরণে ‘আম’ ও ‘মাছ’ বহুবচন অর্থে ব্যবহৃত, কিন্তু রূপমূলে বহুবচনের কোন চিহ্ন ব্যবহৃত হয়নি।
ডি/টা/লি প্রভৃতি বন্ধরূপমূল শুধু অপ্রাণীবাচক রূপমূলের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়।
আম + ডি
উইটা (সেটা)
উই + টা
কতডি (কতগুলো)
কত + ডি
গাছটা (গাছটি)
গাছ + টা
সবডি (সবগুলো)
সব + ডি
আমডি (আমটি)
কতাড়ি (কথাগুলো)
কতা + ডি
এগুলি (এতগুলো) এত + লি
যতলি (যতগুলো)
যত + লি
বহিরাগত শ্রমিকদের ভাষার সংমিশ্রণের ফলে ডেমরা থানার, রাণীমহল, সারুলিয়া অঞ্চলে প্রাণীবাচক রূপমূলেও ‘ডা’ রূপমূল ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমন- মানুডা, ছেরিডা।
আদি ও অস্তে ব্যবহৃত বহুত্ববাচক রূপমূল
১. সব মাইনশের
(সব মানুষের)
এখানে ‘সব’ (অনেক) বহুবচন মাইনশের ‘সব’ – বহুবচন
(অনেক দিনের) কত (অনেক) দিনের ‘এর বহুবচন নির্দেশ করছে।
২. এখন সব
(এগুলো সব এখন (এগুলো) সব (অনেক) দুটি রূপমূলই বহুত্ববাচক রূপমূল।
৩. কত দিনের
আদিতে এবং অন্তে বহুত্ববাচক রূপমূল ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ডেমরার শ্রমিকশ্রেণির ভাষায়।
ঘ. ক্রিয়ার রূপ
→ তুই ক, আমি কই, হে কয়, তিনি করেন
বর্তমানকাল- অ, অও, ই, এ, এন
অতীতকাল ইছি, ছি, ছিলাম
→ কইছিলাম, কইছি, করছিলাম, করছি, খাইছি → কমু, খামু, যামু, করমু, কইবো
ভবিষ্যৎকাল- মুইবো
ঙ. পুরুষ
ডেমরা অঞ্চলের ভাষায় কর্তার পুরুষ ভেদে ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য দেখা যায় ।
বর্তমানকাল
পুরুষ -ক্রিয়ারূপ
আমি- কই (ই)
তুমি – কও (অও)
হে -কয় (অয়)
বর্তমানকালের ‘বলা’ ক্রিয়াটি আমি, তুমি ও সে অর্থাৎ পুরুষ ভেদে ভিন্ন রূপ লাভ করেছে। তেমনিভাবে অতীতকাল ও ভবিষ্যৎকালেও ক্রিয়ার রূপের পরিবর্তন দেখা যায়।
অতীতকাল
পুরুষ-ক্রিয়ারূপ
আমি-কইছি (ইছি)
আমি-কইছিলাম (ইছিলাম)
তুমি-কইছিলা (ইছিলা)
তিনি কইছিলেন (ছিলেন)
ভবিষ্যৎকাল
পুরুষ-ক্রিয়ারূপ
আমি-কমু (মু)
তুমি-কইবা (ইবা)
হে-কইবো (ইবো)
সম্প্রসারিত ও সাধিত রূপমূল
সম্প্রসারিত ও সাধিত রূপমূল হল মুক্তরূপমূলের সঙ্গে বদ্ধরূপমূলের গাঠনিক ও প্রায়োগিক দিকের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। বদ্ধরূপমূল ও মুক্তরূপমূলের সংযোগে এর গঠনগত দিকের পরিবর্তন ও অর্থগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে বদ্ধরূপমূল দুভাগে বিভক্ত :
১. সম্প্রসারিত রূপমূল ও
২. সাধিত রূপমূল।
সম্প্রসরিত রূপমূল
মুক্ত রূপমূলের সঙ্গে বদ্ধরূপমূল সংযুক্ত হয়ে ক্রিয়ার কাল, বচন, পুরুষ, কারক, লিঙ্গ, নির্দেশক ব্যাকরণগত সম্পর্ক প্রকাশক নতুন রূপমূল গঠন করে, একে সম্প্রসারিত রূপমূল বলে। মুক্ত রূপমূলের শেষে বদ্ধরূপমূল সংযুক্ত হয়ে গঠিত সম্প্রসারিত রূপমূলটি তার আভিধানিক অর্থ পরিবর্তন না করেই বিভিন্ন শ্রেণির ক্রিয়া সম্পাদন করে। সম্প্রসারিত রূপমূল হল রূপমূলের গঠনগত দিকের পর্যালোচনা।
ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় সম্প্রসারিত রূপমূলের গঠন, পরিবর্তন ও প্রয়োগ পর্যায়ক্রমে উদাহরণসহ আলোচনা করা হল :
১. অন্ত্যপ্রত্যয় (কারক-বিভক্তি )
বাক্যে একটি রূপমূলের সঙ্গে অন্য রূপমূলের সম্পর্ক বোঝাতে বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। নিচে ডেমরায় প্রচলিত ভাষার একবচন ও বহুবচনে বিভিন্ন বিভক্তির চিহ্ন দেখানো হল :
বিভক্তি
প্রথমা-
দ্বিতীয়া-
তৃতীয়া-
চতুর্থী-
পঞ্চমী-
ষষ্ঠী-
সপ্তমী-
একবচন
এয়
রেদা, দা
রে
আত্তে, অরতে
র, এর, র
তে, য়, ত
বহুবচন
রা, এরা
গো, গরে
গরদা
গো, গরে
গরতে
গর
গুলান
কর্তৃকারক – প্রথমা বিভক্তি –
ডেমরা আঞ্চলিক
ছেরাডায় বেরাইম্যা
একবচন (য়)
বহুবচন (রা)
না মারে
প্রমিত বাংলা
অর্থ ছেলেটা অসুস্থ
তার ছেলেরা মার জন্য অনেক
হের পুতেরা কম করে
করে
কর্মকারক- দ্বিতীয়া বিভক্তি
একবচন – (রে)
আমারে বাই লইয়া যা।
বহুবচন – (গরে)
আমগরে লইয়া যাবি।
আমাকে বাড়ি
করণ কারক- তৃতীয়া বিভক্তি
একবচন (রেদা)-
তোমারেদা এই কাম অইতো না বুয়া
বুয়া তোমাকে দিয়ে এ কাজ হবে না
বহুবচন (গরদা)-
তোমগরদা এই কাম অইতো না। তোমাদের দিয়ে এ কাজ হবে না।
সম্প্রদান কারক- চতুর্থী বিভক্তি
একবচন (রে)-
হেরে দশ টেকা দিয়া দে।
তাকে দশ টাকা দিয়ে দাও ।
বহুবচন (গরে)-
ফহিরগরে বিক্কা দিয়া দে।
ফকিরদের ভিক্ষা দিয়ে দাও ।
অপদান কারক- পঞ্চমী বিভক্তি
একবচন (আত্তে)- আমাত্তে কিছু নাইকা ।
বহুবচন (গরতে)- আমগরতে কিছু নাইকা।
আমার কাছে কিছু নাই।
আমাদের কাছে কিছু নাই ।
অধিকরণ কারক : সপ্তমী বিভক্তি
একবচন (ত, ও) হেয় ঘরো।
বাইত যাই। হাডো গেছে।
বহুবচন (গুলান)- পুস্কনিগুলান (পুকুরগুলো) হেচন লাগবো। (পুকুরগুলোর পানি সেচতে
সম্বন্ধ-ষষ্ঠী বিভক্তি
একবচন (র)- হের পুত হে দেখবো
হবে।)
তার ছেলে সে দেখবে
বহুবচন (গর)- হেগর জিনিশে তর দরকার কি
তাদের জিনিসে তোর দরকার কি।
কাল ও পুরুষ ভেদে ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় ক্রিয়া বিভক্তির বিবরণ থেকে দেখা যায়-
ক্রিয়ার প্রতিটি কলের সম্মানার্থে মধ্যম পুরুষ এবং সম্মানার্থে নাম পুরুষের ক্ষেত্রে একই বিভক্তি বা বদ্ধরূপমূল সংযোজনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত রূপমূল গঠিত হয়।
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয়কালের সম্মানার্থে মধ্যম পুরুষের সাধারণ কাল এবং সম্মানার্থে মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞায় একই বদ্ধরূপমূল দ্বারা সম্প্রসারিত রূপমূল গঠিত হয়। যেমন-
বর্তমানকাল
ভবিষ্যৎকাল
অনুজ্ঞা
অনুজ্ঞা
সাধারণ মধ্যম পুরুষ (সম্মানার্থে)
এন, অন
বদ্ধরূপমূল
এন, অন
ইবেন
বদ্ধরূপমূল
দ্ধরূপমূল
বদ্ধরূপমূল
কর, বল, খা ইত্যাদি ক্রিয়াবাচক মুক্তরূপমূল ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় বিস্তৃত হয়ে অনেকটা সাধুভাষায় ব্যবহৃত রূপমূলের মত উচ্চারিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। যেমন-খাইতাছি, করতাছি, কইতাছি, লিখতাছি ইত্যাদি।
আরও দেখুন: