আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র সতীর্থ পর্যালোচনা, অনুশিক্ষণ, ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন-এর মাধ্যমে মূল্যযাচাই কাজের পরীক্ষাকরণ – যা অগ্রগতি ও পারদর্শিতার মূল্যায়ন এর অন্তর্ভুক্ত।
আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র সতীর্থ পর্যালোচনা, অনুশিক্ষণ, ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন-এর মাধ্যমে মূল্যযাচাই কাজের পরীক্ষাকরণ
শিখন-শেখানো
শিখন-শেখানো কার্যক্রমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে মূল্যযাচাই। শিখন-শেখানো এবং মূল্যযাচাই এ দু’টি কাজ একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ হিসেবে তুল্য। মূল্যযাচাইয়ের বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি ও কৌশল রয়েছে। শ্রেণি শিক্ষণ কার্যক্রমে শিক্ষকতার শিক্ষণ কার্যক্রমের সফলতা নির্ণয়ে অন্যান্য পদ্ধতি/কৌশলের সাথে সতীর্থ পর্যালোচনা, অনুশিক্ষণ, ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন পদ্ধতিতে মূল্যযাচাই করতে পারেন। একদিকে এগুলো যেমন শিক্ষণ-শিখন কৌশল, আবার অন্যদিকে এগুলো মূল্যযাচাই কৌশলও বটে।
মূল্যযাচাই-এর কাজে এ কৌশলগুলোর বিশেষ বিশেষত্ব হল- এগুলো শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে মূল্যায়নের কাজ পরিচালনার সুযোগদান করে। তাছাড়া কোনো একক কৌশল শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নয়নে মূল্যযাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক এসব কৌশল ব্যবহার করে মূল্যযাচাই কাজে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। এ অধিবেশনে মূল্যযাচাইয়ের কৌশল হিসেবে সতীর্থ পর্যালোচনা, অনুশিক্ষণ, ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো । আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র সতীর্থ পর্যালোনা, অনুশিক্ষণ, ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন-এর ধারণা ।
সতীর্থ পর্যালোচনা
আমরা জানি একই গুরুর শিষ্যকে এক কথায় বলা হয় সতীর্থ। অর্থাৎ সতীর্থ হচ্ছে সহপাঠী। ইংরেজিতে সতীর্থের প্রতিশব্দ Peer. শিক্ষা বিজ্ঞানে সতীর্থ শিক্ষণ এবং সতীর্থ পর্যালোচনা এ পরিভাষা দু’টি একই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। সতীর্থ শিক্ষণ বলতে কোন একটি বিষয়ে এক বা একাধিক শিক্ষার্থী কর্তৃক অন্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে বোঝায়।
সতীর্থ পর্যালোচনা বলতে শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন বিষয়ের জ্ঞান, ধারনা ও অভিজ্ঞতার পারস্পরিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। সতীর্থ পর্যালোচনা এমন একটি শিখন এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের আবেগিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
সাধারণত সতীর্থ পর্যালোচনায় ৩ থেকে ৬ জন শিক্ষার্থী বিষয়বস্তু আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশে শিখন বিষয় শিখে থাকে। এটি আবার দু’জন সতীর্থের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেও হতে পারে ।
অনুশিক্ষণ:
ইংরেজি ‘Micro-Teaching’ পরিভাষাটিকে বাংলা ভাষায় নামকরণ করা হয়েছে অনুশিক্ষণ নামে । ইংরেজি কিংবা বাংলা যেদিক-ই বিবেচনা করা হোক না কেন, এ পরিভাষাটি দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ইংরেজি Micro শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Mikro থেকে এসেছে যার অর্থ অণু, ক্ষুদ্র বা খুব ছোট; আর Teaching শব্দের অর্থ শিক্ষণ বা শিক্ষাদান যা আমাদের সবারই জানা।
সুতরাং Micro-Teaching অর্থ হল অনুশিক্ষণ । এটি মূলত প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকের শিক্ষণ দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বেশী ব্যবহৃত হয়। অনুকূল ব্যবস্থাপনা সাপেক্ষে একটি শ্রেণিকক্ষের সাধারণ শিখন-শেখানো কার্যক্রমে ও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। সিমুলেশন বা ছদ্মশিক্ষণ পদ্ধতিতে যেখানে একজন প্রশিক্ষণার্থী তার উপস্থিত সকল (৩০-৪০ জন বা তার চেয়ে ও বেশি) সতীর্থ শিক্ষার্থীকে নিয়ে এবং নিজে শিক্ষক বেশে একটি পূর্ণ পাঠ তাদের সামনে অধিবেশনের জন্য সাধারণভাবে নির্ধারিতপূর্ণ সময় (৪০-৫০ মিনিট) নিয়ে পাঠ উপস্থাপন করেন।
সেখানে অনুশিক্ষণ পদ্ধতিতে পুর্ণ পাঠের পরিবর্তে পাঠের বিশেষ একটি ক্ষুদ্র অংশ যা সাধারণত ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে এবং শ্রেণির সকল প্রশিক্ষণার্থীর পরিবর্তে কেবল ৫-৭ জনের একটি ক্ষুদ্র দলের সামনে উপস্থাপন করে থাকেন। এখানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী/প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ক্ষুদ্র, শিখন পরিসর বা পাঠের বিষবস্তুর পরিমাণ ক্ষুদ্র; আবার সময় ও আধিবেশনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ক্ষুদ্র; অধিকন্তু ছদ্ম শিক্ষণে যেখানে শিক্ষণের সামগ্রিক দক্ষতার মূল্যায়ন করা হয়, সেখানে অনুশিক্ষণ কেবল পূর্ব নির্ধারিত বা টার্গেটকৃত দু’একটি দক্ষতা উন্নয়নের জন্য পরিচালিত হয়ে থাকে।
এটি মূলত শিক্ষণের উচ্চস্তরের দক্ষতা উন্নয়নের একটি বিশেষ এবং নিবিড় প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণার্থী/শিক্ষার্থীর মাঝে অভীষ্টদক্ষতা কাঙ্খিত মানে অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবার নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষণ কার্যক্রম পুনঃপুন আবর্তিত হতে থাকে। উল্লেখ্য, বর্তমান ইউনিটে অণুশিক্ষণকে একটি মূল্যায়ন কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
ছদ্মশিক্ষণ:
ইংরেজি Simulation-কে বাংলা পরিভাষায় বলা হয় ছদ্ম শিক্ষণ। Simulation-এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ভান, ভান করা, অনুকরণ, ছদ্মরূপ ধারণ, ছদ্মশিক্ষণ। পাঠদান অনুশীলনের জন্য বাস্তব শিক্ষার্থী ও বাস্তব শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তে কৃত্রিম শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে যখন পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, সে পদ্ধতির নাম ছদ্মশিক্ষণ ।
ফলাবর্তন:
ইংরেজি ‘Feedback’ ধারণাটিকে বাংলা পরিভাষায় বলা হয় ফলাবর্তন। বাংলা ভাষার নিরিখে এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে উৎপন্ন দ্রব্যের অংশ বিশেষের পূণঃপ্রত্যাবর্তন; কোন দ্রব্য সম্পর্কে ব্যবহারকারী কর্তৃক সরবরাহকারীকে (উক্ত দ্রব্যের গুণাগুণ সম্পর্কে) প্রদত্ত তথ্য; কোন বিষয়ের গুণাগুন সম্পর্কে ঐ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গঠনমূলক মতামত। ফলাবর্তন (Feedback)-এটি একটি শিক্ষা বিজ্ঞানের পরিভাষা বটে । বাংলা ভাষার আভিধানিক অর্থের সাথে-এর পারিভাষিক অর্থের সাদৃশ্য রয়েছে।
শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে ফলাবর্তন হল— কোন শিক্ষক বা প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকের শিক্ষণ বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অন্য কোন প্রশিক্ষক, শিক্ষা বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ, সহকর্মী কিংবা সতীর্থ কর্তৃক পর্যবেক্ষণপূর্বক উপস্থাপিত কার্যক্রমের সবল-দুর্বল দিক সম্পর্কে উক্ত শিক্ষক বা প্রশিক্ষণার্থীকে মৌখিক বা লিখিতভাবে তথ্য প্রদান করা। এ পরিভাষাটি শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলে তখন ফলাবর্তন বলতে বোঝায়- শিক্ষার্থীর শিখন প্রক্রিয়ায় সহায়তাকারী তথা শিক্ষক কর্তৃক তথ্য বা পরামর্শ প্রদান।
অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিত করে তা উত্তরণের পরামর্শ দেয়াকে ফলাবর্তন বোঝায়। ফলাবর্তন প্রদানের নানা কৌশল ও একাধিক মডেলও আছে। যেমন, DESC Model, John Heron-এর ফিডব্যাক মডেল ইত্যাদি।
আবার ফলাবর্তন কৌশল— যেমন, স্ব- মূল্যায়ন এবং সতীর্থ ফলাবর্তন (Self-Assessment and Peer Feedback), Group Feedback, One to One feedback ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ফলাবর্তনের পদ্ধতি/কৌশল কিংবা মডেল যাই হোক না কেন, এটি একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সাথে একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও বটে। আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র সতীর্থ পর্যালোচনা, অনুশিক্ষণ, ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন-এর মাধ্যমে মূল্যযাচাই কাজের পরীক্ষাকরণ।
সতীর্থ পর্যালোচনার মাধ্যমে মূল্যযাচাই:
সতীর্থ পর্যালোচনা একাধারে একটি শিক্ষার্থী- কেন্দ্রিক শিখন পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। এটি একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এ অর্থে যে- এ প্রক্রিয়ায় দলের কোন একজন শিক্ষার্থী/প্রশিক্ষণার্থীর কোন বিশেষ বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা বা দৃষ্টভঙ্গি বা তার উপস্থাপিত কোন একটি পাঠ সম্পর্কে অন্য সতীর্থরা পারস্পরিক আলোচনা-পর্যালোচনা করে থাকে এবং এ পর্যালোচনার মাধ্যমে উক্ত শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক শিক্ষার্থী কর্তৃক অন্য শিক্ষার্থীদের শিখন কাজের পর্যালোচনার মাধ্যমে মূল্যযাচাই করা হয়।
অর্থাৎ একই শ্রেণিতে একই বৈশিষ্ট্যের কিংবা সমযোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পারস্পরিক মত বিনিময় ও আলাপ-আলোচনার এবং যৌথ কার্যকলাপের ভিত্তিতে শিক্ষাদান, গ্রহণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াই হলো সতীর্থ শিক্ষণ ও মূল্যযাচাই।
এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় অন্য শিক্ষার্থীদের কাজ পর্যালোচনা, মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী ফলাবর্তন প্রদান করা হয়। এ ধরনের মূল্যায়ন জোড়ায় বা দলে করা যায় যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতামূলক শিখনের সুযোগ করে দেয়। দাখিল স্তরে অন্যান্য পাঠ্য বিষয়ের ন্যায় আরবি ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রেও সতীর্থ শিক্ষণ বা সতীর্থ পর্যালচনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকতার মূল্যযাচাই কাজে বৈচিত্র্য আনতে এ ধরনের আধুনিক এবং অংশগ্রহণমূলক মূল্যযাচাই প্রক্রিয়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ামূলক পদ্ধতিও বটে।
অনুশিক্ষণের মাধ্যমে মূল্যযাচাই:
অনুশিক্ষণের প্রাথমিক ধারনা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। এ পর্বে আমরা অনুশিক্ষণের সাহায্যে মূল্যযাচাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করবো। অনুশিক্ষণের সাহায্যে মূল্যযাচাই প্রক্রিয়ার পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ:
১. প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের/সতীর্থদেরকে ৫/৭ জনের একটি দলে বসাবেন।
২. প্রশিক্ষণার্থী মূলপাঠের একটি খণ্ডাংশ ৫/৬ মিনিট সময়কালের মধ্যে উপস্থাপন করবেন ।
৩. পাঠের খণ্ডাংশ উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী এক একটি শিক্ষণ কৌশল সামনে উপস্থাপন করবেন এবং সম্ভব হলে তার ভিডিও চিত্র ধারনের ব্যবস্থা রাখবেন।
৪. শিক্ষণ-শিখন কাজ মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের ৫ থেকে ৭ পয়েন্ট স্কেলের একটি মূল্যযাচাই সীট সরবরাহ করা যেতে পারে অথবা বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষকগণ নিজেরাই নিজেদের মত করে তৈরি করে নিয়ে মূল্যযাচাই করতে পারেন।
৫. পাঠদান শেষ হবার পর বিশেষজ্ঞগণ তাদের পুরণকৃত সীট/ফলাবর্তন লিপি নিয়ে মুখোমুখি আলোচনা করে প্রশিক্ষণার্থীকে তার কৌশল, আয়ত্তমান সম্পর্কে অবহিত করবেন।
৬. উদ্দিষ্ট শিক্ষণ কৌশলটি প্রত্যাশিতমানে অর্জিত না হলে প্রশিক্ষণার্থী আবার একই পাঠের অংশটুকু অন্য একদল শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করবেন। মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে একজন প্রশিক্ষণার্থী
৭. এভাবে শিক্ষণ দক্ষতাসমূহের প্রতি পুনঃপুন অনুশীলন ও উচ্চস্তরের শিক্ষণ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন এর সাহায্যে মূল্যযাচাই:
আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র শিক্ষাদান এবং এর মূল্যযাচাইয়ের ক্ষেত্রে ছদ্মশিক্ষণ ও ফলাবর্তনের গুরুত্ব অনেক। কারণ ফিকহ-এর বিভিন্ন ব্যবহারিক বিষয়গুলোর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে এ কৌশল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছদ্মশিক্ষণ ও ফলাবর্তনের মাধ্যমে যেমন শিক্ষণ দক্ষতার উন্নয়ন করা যায়, তেমনি-এর মাধ্যমে মূল্যযাচাই করা যায়। ছদ্মশিক্ষণে অবতীর্ণ হয়ে একজন প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক পাঠ উপস্থাপন পরবর্তী সময়ে একদিকে যেমন তিনি তার নিজের উপস্থানের উপর প্রতিফলনপূর্বক আত্ম-মূল্যায়ন করতে পারেন।
আবার তিনি প্রশিক্ষক ও সতীর্থদের ফলাবর্তনের মাধ্যমেও মূল্যায়িত হন। এভাবে ছদ্মশিক্ষণ ও ফলাবর্তন শিক্ষণ দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সাথে মূল্যযাচাই কাজের ও অগ্রগতি পরিবীক্ষণ করে। ছদ্মশিক্ষণ ও ফলাবর্তনের সাহায্যে মূল্যযাচাই নিম্নোক্ত প্রক্রিয়ায় সংগঠিত হয়
১. প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্য থেকে একজন শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।
২ . প্রশিক্ষণ অধিবেশনের বাকি সতীর্থ প্রশিক্ষণার্থীরা শিক্ষার্থীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন ।
৩. প্রশিক্ষক/বিশেষজ্ঞ বাকি প্রশিক্ষণার্থীদের এক বা একাধিক জনকে উপস্থাপিত পাঠের সবল-দুর্বল এবং উন্নয়নযোগ্য দিক পর্যবেক্ষণ পূর্বক ফলাবর্তন (প্রতিবেদন) লিখতে দায়িত্ব দিবেন এবং তিনি নিজেও শিক্ষার্থীর পাঠদান অনুশীলন ডায়েরিতে ফলাবর্তন লিখবেন |
8. এক্ষেত্রে পাঠ উপস্থাপনকারী প্রশিক্ষণার্থীর কোন কোন দিক মূল্যায়ন করা হবে, শিক্ষণ পরিচালনা নীতিমালা কী হবে, শিক্ষার্থীদের ভুমিকা কী হবে সে সব ব্যাপারে প্রশিক্ষক/বিশেষজ্ঞ প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে নির্ধারিত প্রশিক্ষণার্থীকে পাঠ উপস্থাপন করতে বলবেন ।
৫. ঐ প্রশিক্ষণার্থীর পাঠ উপস্থাপন শেষে প্রশিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত ফলাবর্তনকারী যথা নিয়মে ফলাবর্তন প্রদান করবেন। বিশেষতঃ প্রথমে সবল দিক এবং পরে দুর্বল দিক চিহ্নিত করতে বলবেন এবং ফলাবর্তনের সময় প্রশিক্ষণার্থীর দুর্বলদিকগুলোকে ইতিবাচক ভাষায় তুলে ধরতে হবে।
৬. পাঠ উপস্থাপন শেষে শিক্ষক প্রশিক্ষণার্থীকে স্বমূল্যায়ন করতে বলতে পারেন ।
৭.পর্যবেক্ষক বা প্রশিক্ষক যখন ফলাবর্তন প্রদান করবেন তখন প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক তাকে বাধা দিবেন না, মনোযোগ সহকারে সব শুনবেন।
৮. প্রশিক্ষণার্থীরা যখন মূল্যায়ন করবেন এবং ফলাবর্তন প্রদান করবেন তখন প্রশিক্ষক বাধা দিবেন না।
৯. লক্ষ্য রাখতে হবে পাঠদানের আগে যে নির্ণায়ক ধরে নেয়া হয়েছিল তার ওপরই ফলাবর্তন প্রদান করতে হবে।
১০ সুনির্দিষ্ট দক্ষতার উন্নয়নের জন্য অবশ্যই গঠনমূলক ফলাবর্তন দিতে হবে।
১১. মূল্যায়নশিটে/নির্ধারিত ডায়েরিতে মন্তব্য লিখতে বলবেন।
১২. এরপর ৩/৪ জনের নিকট ফলাবর্তন নিবেন ।
১৩. অধিবেশনের বাকি অংশগ্রহণকারীদের মন্তব্যও তুলে ধরতে বলবেন।
১৪. সবশেষে প্রশিক্ষক দক্ষতার উন্নয়ন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক উপদেশ দেবেন এবং পরবর্তী পাঠদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিবেন। এভাবে প্রতিজন প্রশিক্ষণার্থী একাধারে পর্যায়ক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজে মূল্যায়িত হবেন এবং সতীর্থদের মূল্যায়ন করবেন।
সর্বোপরি, ছদ্মশিক্ষণ ও ফলাবর্তন কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত সহজে আয়োজন ও পরিচালনা করা যায়। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা শিক্ষণ দক্ষতা অর্জন করে। এ পদ্ধতিতে সরাসরি পর্যালোচনার মাধ্যমে শিক্ষণের সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিত হয়। ছদ্মশিক্ষণ এবং ফলাবর্তন-এর সাহায্যে মূল্যযাচাই প্রক্রিয়ায় যথাক্রমে মূল্যায়ন কৌশল নির্ধারণ, শিক্ষার্থীর ভূমিকা নির্ধারণ, শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, মূল্যযাচাই কাজ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, পাঠ উপস্থাপন শেষে পর্যালোচনা/প্রতিফলন এবং সবশেষে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন/নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে হয়।
আরও দেখুনঃ