আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি শিক্ষণ উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার – যা আরবি ভাষার দক্ষতা শিক্ষাদান পদ্ধতি এর অন্তর্ভুক্ত।
আরবি শিক্ষণ উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
ভূমিকা
পাঠকে শিক্ষর্থীদের কাছে সহজবোধ্য, আকর্ষণীয় ও কর্মতৎপরতামূলক করার জন্য শ্রেণিতে শিক্ষক যেসব বস্তুগত সামগ্রী ব্যবহার করেন সেগুলোই শিক্ষা উপকরণ। তবে বৈশিষ্টে ভিন্নতার কারণে এই দ্রব্যসমূহের কোনোটিকে (Instructional Materials)সহায়ক সামগ্রী আর কোনোটিকে (Teaching Aids)বলা হয় ।
যেসব বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান পাঠের বিষয়বস্তুর ধারণা প্রদান বা লাভে প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে সহায়তা ও দিক-নির্দেশনা দেয় সেগুলোই সহায়ক সামগ্রী (Instructional Materials)। যেমন: পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক-নির্দেশিকা, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, ওয়ার্ক-বুক, তথ্য পুস্তিকা, মডেল, মানচিত্র, ফিল্ম, ভিডিও, ডিজিটাল কন্টেন্ট, তথ্য-পোস্টার, তালিকা, অনুচিত্র, শিক্ষকের ফিডব্যাক সামগ্রী, তথ্যছক, ছবি, নমুনা, বাস্তব দ্রব্যাদি ইত্যাদি।
অন্যদিকে যেসব বস্তুগত উপাদান পাঠদানের ক্ষেত্রে পাঠের বিষয়বস্তু অনুধাবনে প্রত্যক্ষ কোনো ভুমিকা না রাখলেও শ্রেণিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কাজে সহায়তা করে, সেগুলোকে শিক্ষা উপকরণ (Teaching Aids)ববে। যেমন— চক, ডাস্টার, চকবোর্ড, বুলেটিন বোর্ড, মাল্টিমিডিয়া, পোস্টার পেপার, ফ্লাশকার্ড, কম্পিউটার, ওভারহেড, প্রজেক্টর প্রভৃতি। শিক্ষা উপকরণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তবে ব্যবহারিক উপযোগিতার ভিত্তিতেই এই শ্রেণিভাগ করা হয়ে থাকে ।
শ্রবণভিত্তিক:
রেডিও, টেপরেকর্ডার, মাইক্রোফোন, মোবাইল, কম্পিউটার, সাউন্ডসিস্টেম প্রভৃতি।
দর্শনভিত্তিক:
বিভিন্ন প্রকার মডেল, পাঠ্যপুস্তক, কর্মপত্র, চাট, বোর্ড, অঙ্কিত চিত্র, ফ্লিপচার্ট, বাস্তব বস্তু, মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম, ম্যাপ, পোস্টার পেপার, ফটোগ্রাফ, স্লাইড প্রজেক্টর, পোস্টার, নকশা, ম্যাগাজিন, জার্নাল, ছবি, ভূগোলক, মানচিত্র, রেখাচিত্র, ধারণা মানচিত্র প্রভৃতি।
কর্মসম্পাদনমূলক:
দর্শনীয় ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ, প্রকৃতি, গ্রন্থাগার, সেমিনার, কর্মশালা, মেলা, খামার, মিউজিয়াম, প্রভৃতি। (৭)
অনুসন্ধানমূলক:
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সামগ্রী, পরিমাপক ও পরীক্ষণ যন্ত্র প্রভৃতি। শিক্ষা প্রযুক্তি নির্ভর অডিও/ভিডিও কনফারেন্স, প্রোগ্রামভিত্তিক শিক্ষণ, ই-মেইল, ইন্টারনেট, নেটওয়ার্কিং, শিক্ষক বাতায়ন, শিক্ষামূলক ওয়েবসাইড, ব্লগ, ফেসবুক, ল্যাপ্টপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর প্রভৃতি। মূল্যমানের দিক থেকে শিক্ষা উপকরণকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
অধিক মূল্যের:
মাল্টিমিডিয়া, ভিসিডি, চলচিত্র।
স্বল্প মূল্যের:
চাট পোস্টার, চিত্র, মানচিত্র, মডেল, গ্লোব।
বিনা মূল্যের:
ক্যালেন্ডারের দৃশ্য, খাদ্যশস্য, অর্থকরি ফসল। আরবি ভাষা পাঠদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন উপকরণ
উপরে উল্লিখিত প্রায় সকল উপকরণই আরবি ভাষা পাঠদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তবে উপকরণ ব্যবহার যেহেতু নির্ভর করে পাঠের বিষয়বস্তু, বিষয়বস্তুর কাঠিন্য, শিখনফল, পাঠদানের পদ্ধতি ও কৌশল, শিক্ষার্থীর বয়স ও আগ্রহ, শ্রেণিকক্ষের বাস্তবতা প্রভৃতির উপর— তাই বিষয়ভিন্নতার কারণে আরবি ভাষা (গদ্য ও কবিতা) পাঠদানের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী উপকরণের তালিকাটি নিম্নরূপ হতে পারে:
শিক্ষা উপকরণের উপযোগিতা
শিক্ষা কার্যক্রমকে সক্রিয়তাভিত্তিক, সহজ, সাবলীল, বাস্তবমুখী করে তোলার জন্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার অনস্বীকার্য। এর কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তু সম্পর্কে মূর্ত ধারণা লাভ করে, শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয়, শিখনে স্বতঃস্ফুর্ততা আসে, বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় হয়, শ্রেণির একঘেয়েমী দূর হয়। অন্যদিকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক খুব সহজে, অল্প শ্রমে, অল্প সময়ে, অল্প কথায় অনেক জটিল বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে অর্থপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে পারেন ।
শিক্ষদান পদ্ধতি আজ গতানুগতিকতার পথ পরিহার করে আধুনিক ও নতুন চিন্তা-ধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শ্রেণিপাঠে শিক্ষককেন্দ্রিকতার পরিবর্তে এসেছে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা যেহেতু ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধণ করে তাই শ্রেণিকক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে পুস্তক সর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা অপসৃত হয়ে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষা আজ স্বীকৃত হচ্ছে। শিক্ষাকে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করতে বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ব্যবহারে যে পাঠদান জীবন্ত হয়, ধারণা (Conception) হয়, শিক্ষা আনন্দদায়ক হয় তা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কাছেও আজ স্পষ্ট।
শিক্ষা উপকরণ নির্বাচন ও ব্যবহার
শিক্ষা উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষককে অত্যন্ত কৌশলী হতে হয়। শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ্য, চিন্তা, মেধা, আগ্রহ, প্রবণতা, শিক্ষণের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, কলাকৌশল, সময়, ব্যবহারের প্রক্রিয়া/কৌশল, বিষয়বস্তুর সাথে সম্পৃক্ততা, ব্যবহারযোগ্যতা, শ্রেণিতে শিক্ষার্থীও সংখ্যা, পরবর্তী সময়ের জন্য সংরক্ষণের সুবিধা-অসুবিধা তথা উপকরণের উপযোগিতা, নির্ভরযোগ্যতা, সহজলভ্যতা প্রভৃতি দিক বিবেচনায় রেখে শিক্ষা উপকরণ নির্বাচন ও ব্যবহার করতে হয় ।
সহায়ক সামগ্রী ও শিক্ষা উপকরণের গুণগত মান উন্নয়নের জন্যও শিক্ষককে সবসময় চিন্তাশীল থাকতে হয়। শিক্ষা-উপকরণ উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ব্যবহার করতে গিয়ে যখনই কোন সমস্যা দেখা দেয়, তখন থেকেই শিক্ষককে ভাবতে হয় কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পরবর্তীতে ঐ সমস্যা এড়ানো যাবে। উপকরণ নির্বাচন ও এর ব্যবহার কৌশল উন্নয়নে শিক্ষককে প্রতিনিয়তই নিম্নলিখিত বিষয়ে চিন্তাশীল থাকা আবশ্যক-
- কী কী বিষয় নতুন সংযোজন ও বিয়োজন দরকার ।
- শিক্ষার্থীরা কোন দিকটিকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করছে।
- কোন দিকটি শিক্ষার্থীর কাছে বিরক্তিকর মনে হচ্ছে।
- শিক্ষারা বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে কি না।
- ব্যবহার করতে গিয়ে কী কী সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
- কী পদক্ষেপ নিলে ঐ সমস্যাসমূহ দূরীভূত হবে ।
- পাঠকে কীভাবে আরো সহজ ও আকর্ষণীয় করা যায়।
- তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে কীভাবে-এর উপযোগিতা আরো বাড়ানো যায়।
- পরিবেশিত তথ্য কতটা যুক্তিনির্ভর, বাস্তবসম্মত ও মুর্তিমান।
আরও দেখুনঃ