বাক্যের প্রকার

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-বাক্যের প্রকার

বাক্যের প্রকার

সরল বাক্য

ডেমরার শ্রমিকদের কথোপকথনের সময় ছোট ছোট সরল বাক্যের প্রচলন খুব বেশি দেখা যায়। বাক্য গঠনে SOV পদ্ধতিতে বাক্য গঠিত হয়। তবে প্রচলিত বাক্যে অনেক সময় কর্তা, কর্ম, ও ক্রিয়ার অবস্থান পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বাক্যের রূপমূলগুলোর পারস্পরিক প্রতিস্থাপন সম্ভব। বাক্যে ব্যবহৃত কর্তা বা কর্ম আগে বা পরে ব্যবহৃত হতে পারে। এই স্থান পরিবর্তনের কারণে সাধারণত বাক্যের অর্থের পরিবর্তন ঘটে না। যেমন-

 

বাক্যের প্রকার

 

উল্লেখিত উদাহরণে কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়ার স্থান পরিবর্তন সত্ত্বেও বাক্যের অর্থের কোন পরিবর্তন হয়নি। ভাষাতত্ত্বে বাক্যের এ ধরনের পরিবর্তনের রীতিকে আরোহণ সূত্র বলে। এরকম সরল বাক্য ডেমরার আঞ্চলিক কথ্যভাষায় বহুল প্রচলিত।

প্রশ্নবোধক বাক্য

ডেমরার শ্রমিক শ্রেণির ভাষার বাক্য SOV পদ্ধতিতে গঠিত। ক্রিয়া বাক্যের শেষে ব্যবহৃত হয়, তার পূর্বে বিশেষ্য বসে। আবার কখনও কখনও প্রশ্নবোধক বাক্যে ক্রিয়া নির্দেশক শব্দের আগে ও শেষে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমন-

১. কাম করছো নি মিয়া?

2. কিরে মেইলো গেছিলি? কিরে মিলে গিয়েছিলি?

ক্যামনে যাবি?

কেমন করে যাবি?

১ নম্বর উদাহরণে বক্তা বাক্যের শেষে সম্বোধনমূলক রূপমূল ‘মিয়া’ ব্যবহার করেছেন এবং তার নির্দেশিত
কাজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
২ নম্বর বাক্যে ‘কিরে’ সম্বোধন করে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে।
৩ নম্বর বাক্যে ‘ক্যামনে’ প্রথমেই ব্যবহার করে কিভাবে যাবে সেই বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

 

বাক্যের প্রকার

শর্তমূলক বাক্য

বই পড়লে লেবেনচুস দিমু। (বই পড়লে লজেন্‌স দেবো।)
উদাহরণের বাক্য দ্বারা শর্ত বোঝানো হয়েছে। শর্তমূলক বাক্যে ক্রিয়া মাঝখানে বসে থাকে। এ ধরনের শর্তমূলক বাক্যের বহুল ব্যবহার দেখা যায় ডেমরার শ্রমিক শ্রেণির ভাষা এবং স্থানীয় ভাষায়ও ।

ধনাত্মক বাক্য

ধনাত্মক বাক্য ক্রিয়া বাক্যের শেষে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমন: হ আমি করছি। (হ্যাঁ আমি করেছি) অনেক সময় বক্তা শুধু একটি রূপমূল উচ্চারণ করে তা বাক্যরূপে ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রশ্নের
পর উত্তর দেবার প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যেমন-
তুই খাইছত? -খাইছি ।

উপরের উদাহরণ শুধু প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রক্রিয়ার একটি রূপমূলই ‘খাইছি’ বাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়েছে।

না-বোধক বাক্য

প্রমিত বাংলার ঋণাত্মক বাক্যে না সাধারণত বাক্যের শেষে ব্যবহৃত হয়। এই ব্যবহারের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায়। এখানে না-বোধক বাক্যের ক্ষেত্রে ‘না’ বাক্যের প্রথমে, মাঝে ও শেষে ব্যবহৃত হয়। বক্তা শ্রোতার কোন উক্তিতে বিরক্ত বা উত্তেজিত হলে বাক্যের প্রথমে বা মাঝে ও শেষে ‘না’ ব্যবহৃত হয়।

বাক্যের প্রথমে ‘না’ ব্যবহৃত হলে তার পরবর্তী ক্রিয়াবাচক রূপমূলের পর ‘না’ ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যের প্রথমে ক্রিয়াবাচক রূপমূল ব্যবহৃত হলে পরবর্তী রূপমূল ঋণাত্মক হয়ে থাকে। যেমন-

১. ক. না করতাম না।
না করতারতাম না ।

গ. কইলাম না যামু না।

এখানে ১ সংখ্যা ক ও খ উদাহরণে ‘না’ বাক্যের প্রথমে ও ১.গ উদাহরণ বাক্যের মধ্যে ‘না’ যেভাবে ব্যবহৃত হয় তা দেখানো হয়েছে।

আমি যামু না। (আমি যাবো না)

আমি খামু না। (আমি খাবো না)

গ. কইলাম না খামু না। (বললাম না খাবো না )

প্রমিত বাংলার ন্যায় ২ নম্বর উদাহরণে ক ও খ ঋণাত্মক বাক্যে ‘না’ বাক্যের শেষে ব্যবহৃত হয়েছে। গ- এর উদাহরণে ‘না’ দুবার ব্যবহৃত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বক্তা শ্রোতার কোন উক্তিতে উত্তেজিত হয়েছেন। ফলে উক্ত ঋণাত্মক বাক্য প্রয়োগ করেছেন।

যৌগিক বাক্য

ডেমরার শ্রমিকশ্রেণির ভাষায় যৌগিক বাক্যের তেমন প্রচলন নেই। মাঝে মাঝে তারা ছোট ছোট সরল বাক্যের সঙ্গে সংযোজক অব্যয় যোগ করে যৌগিক বাক্যে কথা বলে। যেমন- ‘বাইয়ে মায়েরে কাফর দিছে আলা উয়ে খুশি অইছে।’ এই বাক্যে ‘আলা’ সংযোজক অব্যয় হিসাবে
ব্যবহৃত হয়েছে।

বাক্যাংশ গঠন সূত্র বাক্য বাক্য (সংযোজক অব্যয়+বাক্য)
অর্থাৎ, একটি বাক্য একক বাক্য হিসেবে থাকতে পারে, অথবা একাধিক বাক্য মিলে একটি যৌগিক বাক্য তৈরি হতে পারে যেগুলো সংযোজক অব্যয় দ্বারা পরপর সংবদ্ধ হবে। জটিল বাক্যের গঠন নিচের বৃক্ষচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল :

 

বাক্যের প্রকার

 

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment