ধারণাগত সংগঠন প্ৰকল্প

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-ধারণাগত সংগঠন প্ৰকল্প

ধারণাগত সংগঠন প্ৰকল্প

পান্ডুলিপি তত্ত্বের বিকল্প হিসাবে জ্যাকেনডফ (১৯৮৫) ধারণাগত সংগঠন প্রকল্প প্রস্তাব করেন। জ্যাকেন বলেন, ধারণাগত সংগঠনে কোন পান্ডুলিপি তথ্য থাকে না বরং থাকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত অবধারণমূলক তথ্য PTRANS. ATRANS. MTRANS এগুলো বিশ্লেষণ করা হবে পান্ডুলিপিগত দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং বাগার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে ।

 

ধারণাগত সংগঠন প্ৰকল্প

 

এই বিশ্লেষণ হবে ধারণাগত স্তরে, তবে সেখানে ক্রিয়াশীল হবে অবধারণমূলক তথ্য যা ইন্দ্ৰিয়ক্রিয়ামূলক সংশ্রয় ও ব্যবহারজ্ঞান থেকে আগত। কাজেই জ্যাকেনডফের তত্ত্বে বাগধিক সংগঠন ধারণাগত সংগঠনের অংশ যা ভাষিক সংগঠনের সাথে যুক্ত। জ্যাকেনডফ put (রাখা) ক্রিয়াপদ দিয়ে ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করে ।

ইংরেজীতে put শব্দটি এই বাক্যতাত্ত্বিক তথ্য ধারণ করে যে এটি একটি ক্রিয়া, এর পূর্বে বিশেষ্যবাচক উদ্দেশ্য এবং পরে একটি বিশেষ্যবাচক কর্ম ও একটি প্রেপজিশনাল শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হবে :

put [-N. +V] NP. NP. PP. j k

এর সাথে যুক্ত থাকে একটি ধারণাগত সংগঠন যা এখানে দুইটি বাঁধক সমন্বয়ে গঠিত একটি বিষয়বাগত, – অন্যটি বৃত্তিগত বিষয়বস্তুগত বৰ্ষক লেখায় যে put একটি ঘটনা যেখানে একটি বন্ধ বিশেষ পথে একস্থান থেকে অন্য স্থানে

[event GO ( [thing “);
[FROM ( [place]}]}}} path [TO ( [place))x

বৃত্তিগত বাধক দেখায় যে রাখার কাজটি কারণিকতাকে অন্তর্ভুক্ত করে যেখানে একটি সত্তা ইচ্ছামূলকভাবে কারণগত সূত্রে অন্য একটি সত্তার উপর ক্রিয়া করে :

[ event CAUSE ( [ thing ], [event ACT ( [ thing ], [ thing ] * ) ] ) ]

 

ধারণাগত সংগঠন প্ৰকল্প

 

এই তত্ত্বে বিষয়বস্তুতে বাধক অবধারণের সাথে সম্পর্কিত এবং তা স্থান, উৎস্য প্রভৃতি বাগার্থিক ভূমিকাকে অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যদিকে বৃত্তিগত বাধক ঘটনার সাথে সম্পর্কিত এবং তা কর্তা, কর্ম প্রভৃতি বাগধিক ভূমিকাকে অন্তর্ভুক্ত করে । এভাবে জ্যাকেডফের ধারণাগত সংগঠন প্রকল্প একটি বাগধিক তত্ত্বের সূত্রপাত করে যা বাক্যের সাথে সম্পর্কিত হয়েও বাক্যতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন ।

অ্যাকেনডফ তার পরিশৃঙ্খলায় i j k প্রভৃতি নিম্নোক্ষর ব্যবহার করেছেন। এই নিম্নাক্ষরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের সম্পর্ক বোঝা যায় । যেমন নিম্নাক্ষর বাক্যতাত্ত্বিক স্তরে বিশেষ্যবাচক উদ্দেশ্যকে সূচিত করেছে, বিষয়বাগত বাঁধক দারে এটি উদ্দেশ্যকে সূচিত করেছে এবং বৃত্তিগত বাধক স্তরে এটি কাজের কর্তাকে সূচিত করেছে।

শিক্ষক বইটি টেবিলের উপর রাখলেন যদি আমরা এই বাক্যটি বিবেচনা করি তাহলে দেখবো আলোচা প্রকল্পের রূপায়ন অনুসারে এখানে শিক্ষক শব্দটির ত্রিবিধ পরিচয় রয়েছে এটি একাধারে উদ্দেশ্যে, উৎস্য ও কর্তা।
জ্যাকেনডফের মতে, সকল ভাষার ধারণাগত সংগঠন অভিন্ন, কিছু একেক ভাষা একেকভাবে সেই ধারণাগত সংগঠনকে শব্দে রূপ দেয়।

কাজেই ভাষায় ভাষায় যে বিভর পার্থক্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় তা বাহিরের, অন্তরে সব ভাষা একই ধারণাগত সংগঠনকে লালন করে। চমস্কি (১৯৮১, ১৯৮৬) ও মোটামুটি একই মতামত পোষন করেন। তার মতে সব ভাষারই অন্তর্সংগঠন এক, বাহিরের হাজারো পার্থক্য সত্ত্বেও।

তিনি সকল ভাষায় সাধারণভাবে বিদ্যমান মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুচ্ছের নাম দেন বিশ্বজনীন ব্যকরণ । চমস্কির বিশ্বজনীন ব্যাকরণের পরিচয় দিতে গিয়ে ডি. জে. কুক (১৯৮৮) বলেন, “মানুষ যে ভাষাই ব্যবহার করুক না কেন তাদের মধ্যে ভাষাজ্ঞানের অংশবিশেষ সাধারণভাবে বিদ্যমান।

এটিই হলো বিশ্বজনীন ব্যাকরণ তবে চমস্কির দাৰি মূলতঃ বাক্যিক সংগঠনের উপর, আর জ্যাকেনডফের দাবি বাগার্থিক সংগঠনের উপর। চমস্কির সার্বজনীনতা তাই বাক্যতত্ত্বের অংশ, কিন্তু জ্যাকেনডফের তত্ত্ব অধিকতর ব্যাপক, এটি চমস্কির ভাষা সংগঠনের বিশ্বজনীনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে, কিন্তু বিপরীতক্রমে তা সত্য নয় ।

 

ধারণাগত সংগঠন প্ৰকল্প

 

জ্যাকেনওফের ধারণাগত সংগঠন প্রকল্পটি অভিনবতে ভরা। এর দাবিসমূহ যুক্তিগ্রাহ্য, বিশ্লেষণ প্রনালী সু এবং সম্ভাবনা সুদূরপ্রসারী। তবে এ তত্ত্ব নিয়ে চরম মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। সমালোচকদের পুঙ্খানাপুঞ্জ বিচার ও বাস্তব কার্যকারিতা যাচাইয়ের পরই বলা সম্ভব হবে এর সবলতা দুর্বলতা কোথায় ও কতটুকু ।

তবে তুলনামূলক বিচারে এটুকু মনে হয় এটি একটি উচুমানের বাগার্থিক তত্ত্ব যা ভাষা, অর্থ ও ধারণার মধ্যে একটি চমৎকার সামগ্রস্য বিধান করে।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment